দুর্নীতির অভিযোগে ৩ সহকারী শিক্ষক বরখাস্ত দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ২:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ রাকিব হোসাইন।শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে উপজেলায় শিক্ষকদের ট্রেনিং ভাতার নাস্তা ও বিভিন্ন খাতের টাকা সঠিকভাবে বণ্টন করেন না উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহিনা আক্তার।এমন অভিযোগ তুলে ৪৫ জন শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিন্টেনডেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।এরপর ওই শিক্ষকদের মধ্যে নেতৃত্বদাতা তিন শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ তুলে তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর _শাহিনূর আক্তারের, বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের ইংরেজি বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিংয়ে শিক্ষকদের জন্য ব্যাগ, কলম, নাস্তা ও ভাতাসহ নানা বরাদ্দের সঠিক বণ্টন না করায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন শিক্ষক।এবিষয়ে গত ২৩ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিন্টেনডেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ইন্সট্রাক্টর শাহিনূর আক্তারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তথ্য সংগ্রহসহ শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহে নেতৃত্ব দেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক আফতাবুল করীম মেননসহ তিন শিক্ষক নেতা।এরপর গত ২৫ জুলাই ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনূর আক্তার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা শিক্ষকদের নেতৃত্বদাতা আফতাবুল করীম মেননসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ট্রেনিংয়ের প্রতি ব্যাচ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করাসহ অসদাচরণ করার অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পাল্টা লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনূর আক্তার। ওই অভিযোগটি কোনো প্রকার তদন্ত কমিটি দিয়ে তদন্ত না করে গত ২৯ আগস্ট ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফতাবুল করীম মেনন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও সহ-সম্পাদক শামীমা আক্তার সীমাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল হাসান।বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।অন্যদিকে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনূর আক্তারের বিরুদ্ধে করা ৪৫ জন শিক্ষকের অভিযোগের তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি করা হলেও সেই কমিটির কার্যক্রম ধীর গতিতে এখনো চলমান রয়েছে। কবে শেষ হবে এই তদন্ত সঠিক ভাবে এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ জানাতে পারেন নি। উপজেলার একাধিক শিক্ষক বলেন, ক্ষমতার জোরে প্রায় সাড়ে ৯ বছর ধরে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন শাহীনূর আক্তার।তিনি যোগদানের পরেই রিসোর্স সেন্টারটি নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তিনি ঠিকমত অফিসে আসেন না। এছাড়াও ট্রেনিংয়ে শিক্ষকদের প্রাপ্য টাকা সম্পূর্ণ দেন না। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে টাকা চাইলে তিনি বলেন, মসজিদে ওই টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন।প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তার এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষকসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ভুক্তভোগী উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনূর আক্তার স্যারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে পিটিআই অফিসার বরাবরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।অভিযোগ দায়ের করার বিষয়টির নেতৃত্ব দিয়েছি আমিসহ আফতাবুল করীম মেনন ও শামীমা আক্তার সীমা ম্যাডাম। মূলত আমরা নেতৃত্ব দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবিসহ অসদাচরণের মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন।শাহীনূর আক্তার স্যারের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটি করা ছাড়াই আমাদেরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার দাবি করছি। ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনূর আক্তার বলেন, সরকারিবিধি অনুযায়ী আমি ট্রেনিংয়ের খরচ করে থাকি। আফতাবুল করীম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা ট্রেনিংয়ে ব্যাগ সাপ্লাই করে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে দিতে বলেছিলেন আমাকে। যদি এই সুযোগ তাদের দেওয়া না হয়, তবে প্রতি ব্যাচে তাদের ৩ হাজার টাকা চা-মিষ্টি খেতে দেওয়ার জন্য দাবি করেন।বিষয়টি সরকারি চাকরির বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই আমি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। স্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল হাসান বলেন, তিনজন শিক্ষক উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনূর আক্তারের কাছে চাঁদা দাবিসহ অসদাচরণ করেছেন বলে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সাধারণত অভিযোগ পাওয়ার পরেই প্রথমে অভিযুক্তদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তদন্ত কমিটিসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এমনই নিয়ম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের। সরকারি কর্মচারী আইনে তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পিটিআই সুপারিন্টেনডেন্টসহ আপনার বরাবর শাহীনূর আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা।বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের দাবি শাহীনূর আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণেই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নুরুল হাসান বলেন, শিক্ষকদের দায়েরকৃত অভিযোগটি পিটিআই কর্মকর্তার দেখার কথা। বিষয়টি আমার নয়। শরীয়তপুরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিন্টেনডেন্ট কামরুন নাহার বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। SHARES সারা বাংলা বিষয়: