পবিত্র শ’বে মি’রাজ ও আমাদের শিক্ষা: মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২০

 

মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান

মি’রাজ আরবি শব্দ।আভিধানিক অর্থ হল উর্ধবালোকেগমন বা আহরণ। নবুওয়তের একাদশ মতান্তর দ্বাদশ বছরে রজব মাসের ২৬ তারিখে দিবাগত রাতে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা:) এর পবিত্র শ’বে মি’রাজ সংঘটিত হয়।
পবিত্র মি’রাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আলকোরআনে এরশাদ করেন,’ সুবহানাল্লাজি আসরা বি আবদিহী লাইলাম মিনাল মাসজিদিল হারামে ইলাল মাসজিদিল আকসা’।
অর্থাৎ পবিত্র সেই মহান স্রষ্টা যিনি নিজ প্রিয় বান্দাহকে বোরাকে আরোহণ করিয়ে কাবা ঘর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নৈশ ভ্রমণ করিয়েছিলেন।

এই মি’রাজ সম্পর্কে আল্লাহর মূল উদ্দেশ্য ছিল তার প্রিয় বান্দাহকে সৃষ্টিজগৎ আরশে মুয়াল্লাহর কিছু নিদর্শন দেখানো।
এবং তার সান্নিধ্য লাভ করানো।

এমন এক সময় রাসুল (সা:)কে মি’রাজ করানো হয়েছিল যখন মক্কা জুড়ে ইসলামের নবজাগরণ কে স্তব্দ করার জন্য পুরোপুরি ষড়যন্ত্র চলছিল।

মক্কার কাফের সম্প্রদায় রাসুল(সা:)এর সংস্পর্শে এসে দলেদলে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে ছিল ঠিক তখনি কাফেরদের সরদারগণ চিন্তা করতে লাগলেন যে এভাবে চলতে থাকলে মক্কার সকল মানুষ তাদের বাপদাদার পৌত্তলিক ধর্ম মক্কার জমিন থেকে চিরবিদায় নিতে বাধ্য হবে।তাই তারা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

সকল ষড়যন্ত্রে ব্যার্থ হয়ে মুসলমানদের সাথে বয়কট করা ছাড়া আর কোন পথ না দেখে সম্মিলিতভাবে তারা মুসলমানদেরকে শিয়াবে আবু তালিব( আবু তালিবের সত্যাধিকারী পাহাড়ের পাদদেশে)আবদ্ধ করে ফেলে।
মুসলমানদের সাথে মক্কার সকল গোত্র সর্বপ্রকার যোগাযোগ, লেনদেন, বিয়ে শাদী এমনকি দেখাসাক্ষাৎ ও বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ আড়াই বা তিন বৎসর মুসলমানরা তথায় বন্দি অবস্থায় দিনযাপন করেছিলেন।

কাফেরদের এই দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে মুসলমানরা একমাত্র ইসলাম ও মোহাম্মদ (সা:)এর খাতিরে এমন কোন কষ্ট নেই যা তারা সহ্য করেনি। খাদ্যাভাবে মুসলমানদের বৃক্ষলতা খেতে হত।এসব নিঃশেষ হয়ে গেলে মুসলমানরা তৃন খড় পর্যন্ত খেতে হয়ে ছিল।

চারদিক থেকে যখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবরোধ চলছিল তখনি রাসুল(সা:)এর পিতৃব্য আবুতালিব ইন্তেকাল করেন।বয়কট পরিসমাপ্তির কাছাকাছি সময়ে হুজুর(সা:)এর সকল বিপদআপদের সাথী এবং সাহায্যকারী উম্মাহাতুল মুমিনীন হজরত খাদিজা(রা:)ও ইহজগৎ ত্যাগ করেন।
হুজুর(সা:)এর অতি আপনজন এই দুই ব্যক্তির ইন্তেকালে হুজুর(সা:)মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন তখন ই রাসুল(সা:)কে আল্লাহতায়ালা শান্তনা দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা রাসুল(সা:)কে তার সান্নিধ্য লাভ করিয়েছেন।

রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মহানবী (সা:)এশার নামাজ সম্পন্ন করে চাচাতো বোন উম্মেহানীর ঘরে নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলেন।এমন সময় জিব্রাইল(আ:)উপস্থিত হয়ে প্রিয় নবী (সা:)কে বললেন,হে আল্লাহর নবী, আপনি জাগ্রত হোন।আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য দ্রুতগামী বাহন ‘বোরাক ‘নিয়ে এসেছি।পূর্ববর্তী সকল নবী
রাসুলগণ ও সকল ফেরেশতাগণ আপনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

মোহাম্মদ (সা:)জাগ্রত হয়ে প্রথমে অজু করত:দুরাকাত নফল নামাজ আদায়করে আল্লাহর নির্দেশক্রমে পবিত্র বোরাকে আরোহণ করে প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাস এসে পূর্ববর্তী সকল নবীগনের উপস্থিতিতে দু রাকাত নামাজের ইমামতি করেন।
পুনরায় বোরাকে আরোহণ করে উর্ধবলোকে গমন করেন।প্রথম আকাশে হজরত আদম(আ:) বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা:)কে অভ্যর্থনা জানান। তারপর দ্বিতীয় আকাশে ঈসা(আ:)ও ইয়াহিয়া (আ:),তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ:),চতুর্থ আকাশে ইদ্রিস (আ:),পঞ্চম আকাশে হারুন(আ:),ষষ্ঠ আকাশে মুসা(আ:) এবং সপ্তম আকাশে হজরত ইব্রাহীম (আ:)এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন।
তারপর বায়তুল মামুর নামক স্থানে ফেরেশতাদের নিয়ে পুনরায় দু রাকাত নামাজ আদায় করেন।এখানে এসে বোরাক থেমে যায়,এবং জিব্রাইল(আ:) বললেন,হে আল্লাহর রাসুল, এ পর্যন্ত ই আমার সীমানা। এরপর এক কদম অগ্রসর হওয়ার শক্তি আমার নেই।

এখান থেকে রফরফ নামক আরেকটি কুদরতি বাহন রাসুল (সা:)কে আল্লাহতায়ালার আরশে মুয়াল্লাহয় নিয়ে যান।সেথায় আল্লাহতায়ালার সাথে সালাম বিনিময়ের পর কথোপকথন হয়।
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সেখানে প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ও পরবর্তীতে পাচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতের জন্য হাদিয়া স্বরুপ দেওয়া হয়।তারপর হুজুর(সা:) জান্নাত জাহান্নাম অবলোকন করেন।

আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতে অসংখ্য নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন।কিন্তু অসংখ্য নবী রাসুলের মধ্যে কেবলমাত্র আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সা:)ই সকল মাখলুকাতের মধ্যে স্ব-শরীরে মহান আল্লাহতায়ালার দিদার লাভে সক্ষম হয়েছেন।

পবিত্র শ’বে মি’রাজ আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনা অবশ্য ই। শ’বে মি’রাজ রাতটি সকল উম্মতে মোহাম্মদীর নিকট অত্যন্ত মহিমান্বিত ও ফযিলতপুর্ন। এরাতে প্রত্যেক মুসলমানদের নফল নামাজ আদায় করা,পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা, দান খয়রাত করা,অধিক পরিমানে তাসবিহ তাহলিল, যিকির আযকার করার পাশাপাশি তাওবা ইস্তেগফার ও কান্নাকাটি
করে ইসলাম বহির্ভূত কাজে লিপ্ত না হয়ে ফযিলতপুর্ন এই রাতকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অতিবাহিত করা ই বাঞ্ছনীয়।

লেখক
মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
যুগ্ম সম্পাদক
ইসলামী ঐক্যজোট
ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলা।