প্রেমিকাকে না পেয়ে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দী কামাল

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪

রাকিব হোসাইন।প্রেমিকাকে বিয়ে করে স্বপ্নের ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন ‘শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কামাল শরিফ শেখ।কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়_ প্রিয়জনকে হারানোর এই কষ্ট সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন কামাল।এরপর থেকে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।জানা যায়, ভারসাম্যহীন কামাল শরিফ উপজেলার দক্ষিণ ডিঙ্গামানিক এলাকার মৃত আইয়ুব আলী শেখ ও ফাতেমা বেগম দম্পত্তির ছেলে।

সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেজো” তার প্রেম কাহিনী লায়লী-মজনুর চেয়ে কম ছিল না” খুব ভালবাসতেন তার প্রেমিকাকে।হঠাৎ প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক আচরণ করতেন তিনি-তখন তার মা-বাবা তাকে বিয়ে করান_ কিন্তু কামাল তার প্রেমিকাকে ভুলতে পারছিল না।স্ত্রীকে রাখতেন ঘরবন্দী করে- এরপরে হঠাৎ স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন, তখন থেকেই ধীরে ধীরে মানসিক বিপর্যয় নেমে আসে তার জীবনে।

একপর্যায়ে প্রেমিকার শোক ও স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।সেই থেকে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন কামাল শেখ, বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসাও হচ্ছে না তার,,নেই থাকার মতন একটি বসতঘরও’ জড়াজীর্ন একটি টিনের একচালা ঘরের নিচে কাটে তার জীবন।স্বাভাবিক জীবনে কামাল শেখের সহপাঠী ছিলেন প্রতিবেশী আমিনুদ্দিন শেখ।‌ তিনি বলেন,“আমরা একসঙ্গে মাটি কাঁটতাম, মানুষের ক্ষেতে বদলা দিতাম। কামাল খুব ভালো মানুষ ছিল।শুনেছি তার সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই প্রেমিকা ও তার স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার শোকে সে পাগল হয়ে যায়। আমরা চাই সরকার যেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

কামালের ছোট বোন শারমিন আক্তার,বলেন “আমার ভাইয়ের অনেক সাজানো গোছানো সংসার ছিল। কিন্তু সে তার প্রেমিকাকে ভুলতে পারেনি। তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়।এরপর থেকেই ভাই পাগল হয়ে যায়।দীর্ঘ ২০ বছর ধরেই শিকল বাধা অবস্থায় বাহিরে থাকে সে। একটি ঘরও নেই তার। আমার মা খুব কষ্ট করে সংসার চালায়।এখন সরকারিভাবে কোনো সহায়তা করা হলে আমাদের এই অসহায় পরিবারটার অনেক উপকার হয়।কামাল শেখের মা ফাতেমা বেগম” বলেন,“আমার ছেলে আগে ভালো ছিল। তবে তার এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা বিষয়টি জানতাম না। পরে শুনেছি তার প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়।তখন আমরাও তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে করাই। সেই বউও তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পাগল হয়ে যায় আমার ছেলেটা। আমরা তাকে ঢাকায় ডাক্তার দেখিয়েছিলাম।

তবে টাকার অভাবে তাকে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এখন বাইরে একচালা একটি টিনের ভাঙা ঘরে শিকলবন্দী করে রাখি। মা হিসেবে ছেলের এমন কষ্ট আর সহ্য হয় না।এখন সরকার যদি আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে হয়তো আমার ছেলে আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠত।কামাল শেখকে সরকারিভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শঙ্কর চন্দ্র বৈদ্য।তিনি ,বলেন, “আমরা তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।