বিপুল ইসলামঃ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব।ইসলাম ধর্মের নীতি অনুযায়ী,আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি সেরা জীব হিসেবে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যারা তাঁকে একক এবং একমাত্র রব তথা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেছে; তারাই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ ‘ইয়াক্বিন বা পরিপূর্ণ বিশ্বাস’ অর্জন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
আল্লাহ তাআলার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাসই হলো মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ কারণে ইবাদাত-বন্দেগিতে শুধুমাত্র আল্লাহর ধ্যান-জ্ঞান ছাড়া মানুষ আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত বন্দেগী করার মাধ্যমে নিজের ইচ্ছা পরিপূর্ণ করতে পারে। ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় , সুবেদার মনসুর খাঁ এর নির্মিত মসজিদ , যেই মসজিদটি পরিচিত নিদাড়িয়া মসজিদ নামে। জানা যায় সুবেদার মনসুর খাঁর মুখে দাড়ি ছিল না । তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর মুখে দাড়ি হলে তিনি একটি মসজিদ তৈরী করে দিবেন । পরে দাড়ি হলে তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মসজিদ নির্মাণ করে দেন ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১১৭৬ হিজরী সনে সুবেদার মনসুর খাঁ কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয় । প্রাচীনকালের নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মসজিদ হল নিদাড়িয়া মসজিদ। নিদাড়িয়া মসজিদ বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত প্রাচীনতম মসজিদ গুলোর মধ্যে একটি ।মূলত লালমনিরহাট সদর উপজেলার অন্তর্গত পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কিশামত নগরবন্দ মৌজায় অবস্থিত ও বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ।
নিদাড়িয়া মসজিদটি নির্মাণের দিক দিয়ে অনেক উঁচু মানের । ভারী ভারী দেয়াল, উঁচু গম্বুজ, কক্ষের ভেতরের সুন্দর পরিবেশ মসজিদটিকে আলাদা করে রেখেছে। মসজিদটি এক কক্ষের মসজিদ । এর অভ্যন্তরে একটি মাত্র কক্ষ, উপরিভাগে তিনটি গম্বুজ, চার কোণায় চারটি পিলার ও সম্মুখে একটি প্রবেশদ্বার দরজা আছে । মসজিদের সামনেই একটি বিরাট ঈহগাহ্ ময়দান এবং বাম পাশে একটি কবর আছে । কবরটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া না গেলেও অনেকেই মনে করেন কবরটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার কবর ।এই মসজিদের ১০ একর ৫৬ শতক জমি রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দার মোঃ হাসান আলী (৫০)বলেন, আমি শুনেছিলাম এই মসজিদ নির্মাতার মুখে দাড়ি ছিল না তাই তিনি মহান আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা করেন যে, “যদি আমার মুখে দাড়ি গজায় তাহলে আমি একটি মসজিদ নির্মাণ করে দিব।স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রুহুল আমিন(৫৬)বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, সরকার যদি এই নিদাড়িয়া মসজিদটিকে নতুনভাবে সংস্কার করে, তাহলে আমাদের এই পুরাতন মসজিদটি নতুন ভাবে রূপ পাবে এবং স্মৃতির পাতায় নিদাড়িয়া মসজিদের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফতেখা কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম রব্বানী(৪৮)বলেন, নিদাড়িয়া মসজিদের ১০ একর ৫৬ শতক জমি রয়েছে।এই জমি থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে মসজিদে প্রতি বছর উন্নয়নের কাজ এবং ওয়াজ মাহফিল এর আয়োজন করা হয়ে থাকে।বর্তমানে মসজিদের জমিগুলোতে স্থানীয় এক পরাক্রমশালী ব্যক্তি নিজের দখলদারিত্ব স্থাপন করেছে ।মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আইনী লড়াই করে যাচ্ছেন জমিগুলো উদ্ধার করতে ।স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সরকার যেন অতি তাড়াতাড়ি আমাদের মসজিদটি নতুনভাবে সংস্কার করে দেওয়ার উদ্যোগনেয়।