পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার তিন দিকেই নদী। আর এ নদীর পানিতে লবনাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে রয়েছে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। ফলে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এক যুগেও চালু না হওয়ায় সেখানে মিলছে না চিকিৎসা। ফলে মুমূর্ষু ডায়রিয়া রোগীদের ছুটতে হচ্ছে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে।
সেখানেও তীব্র ভীড় থাকায় মিলছেনা বেড। জানা যায়, ২০০৮ সালে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু করা হয়। ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা করা হয়নি হাসপাতালটিতে। যার অজুহাতে এক যুগ পরেও হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেড বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে চার হাজার ট্যাবলেড। যা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল। এ ছাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পর্যাপ্ত স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের মাত্র একটি ইউনিয়নে তিনটি ওয়ার্ডে গভীর নলুকুপ বসে। উপজেলার বাকি অংশের বাসিন্দাদের নদী, খাল ও পুকুরের পানির উপরে ভরসা করতে হয়।
চলমান গ্রীষ্ম মৌসুমে বিভিন্ন জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ও লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো বিপাকে পড়েছে এ জনপদের বাসিন্দারা। পানি বিশুদ্ধ না করে পান করায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।‘‘রেইন ওয়াটার হার্বেস্টিং সিস্টেম” স্বল্প পরিমানে স্থাপন করা হয়েছে। এ এলাকায় এবছর এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সেটাও কাজে লাগছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগির প্রায় ২৫ ভাগ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও মিলছে না আবাসিক চিকিৎসা।
প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আক্রান্তদের পাঠাতে হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। সাউথখালী চর, খোলপটুয়া জাপানী ব্যারাক হাউজ, পাড়েরহাট আবাসন ও চাড়াখালী গুচ্ছগ্রামে ঘণ বসতি পূর্ণ এলাকায় ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসীন্দারা। ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি কারণ কি জানতে চাইলে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আমিন উল ইসলাম বলেন, ইন্দুরকানী উপজেলার তিন দিকেই নদী। বর্তমানে নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই পানি পানের ফলে এ উপজেলার অধিকাংশ লোক উচ্চ রক্ত চাপে ভোগেন।
সাধারণত আমাদের হাসপাতালে আগত প্রায় ২৫ ভাগ রোগীই উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত থাকেন। এছাড়া বর্তমানে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন ধরনের পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রচুর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। এখানে আবাসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু না থাকায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মূমূর্ষ রোগিদের পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্যক্তিগত ভাবে এক হাজার প্যাকেট খাবার স্যালাইন দিয়েছেন। তারপরে হাসপাতালে যে পরিমানে খাবার স্যালাইন রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।