জামাল কাড়ালঃ বাংলা চলচ্চিত্রকেও যেন হার মানায় ৩ সহোদর ভাইয়ের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাছে। যাকে খুশি তাকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে চাঁদা দাবী করে আদায়ও করে নিচ্ছেন তারা। তাদের ভয়ে মুখ পর্যন্ত খুলতে পারছেন না গ্রামবাসি। বরগুনার বেতাগী উপজেলার উত্তর ভোলানাথপুর গ্রামের শাহ আলম তালুকদারের ৩ছেলে সোহেল, সোহাগ ও শাকিলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদকের কাছে এমনি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। অপরদিকে অভিযুক্ত সোহেল ও তার দুই ভাইকে নির্দোষ বলে দাবী করেন।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার ০২নং বেতাগী সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর ভোলানাথপুর গ্রামে প্রায় ৪৫-৫০টি পরিবারের বসবাস। স্থানীয় কয়েক জনের সাখে কথা বললে তারা জানায়, প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর যাবৎ শাহ আলম তালুকদারের ৩ ছেলে সোহেল তালুকদার, সোহাগ তালুকদার ও শাকিল তালুকদারের মারধর ও চাদা দাবীর আতঙ্কে কাটছে উত্তর ভোলানাথপুর গ্রামবাসীর প্রতিটি দিন।স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন জমিজমা বিক্রয়, ছেলে মেয়ের বিবাহ এমন কি কোন স্থাপনা নির্মান করতে গেলেও শাহ আলম তালুকদারের ৩ ছেলেকে দিতে হয় চাঁদা টাকা। চাঁদার টাকা না দিলে মারধর করে সোহেলসহ তার দুই ভাই সোহাগ ও শাকিল।
উত্তর ভোলানাথ পুর গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়া বলেন, ৪বছর আগে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছিল সোহেল। চাঁদা টাকা না দেওয়ায় আকন বাড়ীর খেয়াঘাটের রাস্তার উপর প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে শাহীনের ডান পা ভেঙে দেয় সোহেল ও তার দুই ভাই। দীর্ঘ ৪বছরেও পায়ের ক্ষত শুকায়নি শাহিনের। সোহেল ও তার ভাইদের আসামী করে আদলতে মামলা করে শাহীন। মাত্র কয়েকদিন আগে এই গ্রামের সৌদি প্রবাসী জালাল খানের ছোট ছেলে ফয়সালকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ১লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় নেয় সোহেল তার দুই ভাই। ২০২১ সালের ১৮ই এপ্রিল সোহেল ও তার দুই ভাই পুনরায় ঐ প্রবাসীর স্ত্রী মনুজা বেগমের নিকট ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করলে মনুজা বেগম চাঁদা টাকা না দেওয়ায় ১৮ই এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার সময় আকন বাড়ী খেয়াঘাটের পাকা ব্রিজ সংলগ্ন পাকা রাস্তার উপরে জনসম্মুখে ফয়সালকে মারধর করে সোহেল ও তার দুই ভাই সোহাগ ও শাকিল। ছেলেকে মারধর করতে দেখে মা মনুজা বেগম এগিয়ে আসলে তাকেসহ আরো কয়েকজনকে মারধর করে তারা। মনুজা বেগম বলেন সোহেল সোহাগ ও শাকিলের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। প্রশাসনের কাছে আমরা বিচার চাই।
মা মনুজা বেগম ও ছেলে ফয়সালকে মরধরের কথা উল্লেখ করে ঘৃন্য এই সন্ত্রাসী ৩সহোদর সোহেল, সোহাগ ও শকিলের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার চেয়ে একটি আবেদন পত্রে এলাকাবাসী গনস্বাক্ষর দিয়ে বরগুনা পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগও দায়ের করে। মৃত আঃ হকের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন, ১ বছর আগে সোহেল, সোহাগ ও শাকিল তাদের দাবীকৃত চাঁদা টাকা না পেয়ে তার ছেলে সোলায়মান কে মারধর করে আহত করে। অভিযুক্ত তিন ভাইয়ের মারধরের ভয়ে সংসার, মা বাবাকে বাড়িতে রেখে পত্রিক ভিটা ছেড়ে বর্তমানে ঢাকায় থাকে সোলায়মান।সোহেল ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বেতাগী থানায় রয়েছে একাধিক সাধারণ ডায়েরি। তবে সন্ত্রাসী সোহেল বেতাগী থানা পুলিশের ফর্মা হিসেবে কাজ করার সুবাদে আইনের সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উত্তর ভোলানাথপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ।
তথ্য সংগ্রহ করার সময় সোহাগের ছোট ভাই শকিল তালুকদারের মাদক তৈরির একটি ভিডিও ফুটেজও হাতে আসে প্রতিবেদকের। ভিডিওটিতে সিগারেটের ভিতর মাদক ঢুকাতে দেখা শাকিল তালুকদারকে।অভিযুক্ত সোহেলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন।সোহেল ও তার দুইভাইয়ের দাপটে দিন দিন আতঙ্কিত ও অসহায় পরেছে উত্তর ভোলানাথপুর গ্রামের বাসিন্দারা। উচু নীচু কোন পরিবারই সোহেল ও তার দুই ভাইয়ের হয়রানি হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আইনের চোখ ফাকি দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় ভয়, মারধর ও জিম্মি করে চাঁদাবাজির মত এমন সন্ত্রাসী কর্মজজ্ঞ কিভাবে চালাচ্ছেন তারা? বা তাদের এই অপশক্তির মদদদাত কে? এই প্রশ্ন রইলো যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্টদের কাছে।