এম এ সাঈদ বাবুঃ জীবনের নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ পুরুষ চালিত অটোরিক্সার হাল ধরেছেন জীবন যুদ্ধে অপরাজিত কুড়িগ্রামের শ্রীমতি স্বপ্না রানী নামে এক নারী । কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ, দিগদারী ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমতি স্বপ্না রানী(৩৩) পিতা-মৃত শ্রী চন্দ্র বর্মন। বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতে স্বামী তাকে ছেড়ে অন্য নারীকে বিয়ে করেন। তার একটি মেয়ে ও ছেলে রয়েছে। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাদের খোঁজখবর না নেয়ায় দুটো ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে বিপাকে পড়েন শ্রীমতি স্বপ্না রানী।
অভাবের সাথে সমাজের নানান বাধা-বিপত্তি তাকে জীবনযুদ্ধে পরাজিত করতে পারেনি। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাবা হীন তার মেয়ে ও ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে হবে। বয়সে যৌবনা হলেও অভাবের তাড়নায় তিনি কোন অনৈতিক বা অন্য কোন অপরাধমূলক কাজকে আয়ের উৎস হিসেবে না নিয়ে সংগ্রামী স্বপ্না রানী বেছে নেন অটো চালনার কাজ, প্রথম দিকে তিনি ভাড়ায় চালিত অটো রিক্সা নিয়ে চালনা শুরু করেন, যাতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা প্রতিদিন তার অটোরিকশার মালিককে জমা দিতে হতো। তার মতে, ওই সময় দুই সন্তান নিয়ে সংসারে অভাব-অনটনের কারণে আমি চোখে অন্ধকার দেখছিলাম তাই বাধ্য হয়ে অটো চালানো শুরু করি।
আমার অটোরিকশা চালনা দেখে তৎকালীন নাগেশ্বরী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ হায়াত রহমত উল্লাহ স্যার এর নজরে এলে তিনি তাকে একটি অটোরিকশা কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে তিনি ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা বাদ দিয়ে এই সমাজের বাঁকা চোখকে উপেক্ষা করে নিয়মিত এই পেশায় পারঙ্গম পুরুষ অটোচালকদের মত জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন। মেয়ে রাধারানী নবম শ্রেণীতে ও ছেলে হৃদয় ক্লাস ফোর এর ছাত্র, জীবন-জীবিকার তাগিদে শ্রীমতি স্বপ্না রানী কঠিন পুরুষ শাসিত সমাজে অটোচালনাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন কিন্তু কোন সমস্যা হয় কিনা, বা কেউ তাকে নারী হিসেবে অবমূল্যায়ন করে কিনা।
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, না, যাত্রীরা তাকে যথেষ্ট সম্মান করেন এবং কোন সমস্যা হয় না, এ পেশায় এখন তিনি সিদ্ধহস্ত, প্রতিদিন সাতশ আটশ টাকার মত আয় হয়। তার অটো চালানোর বয়স প্রায় এখন ৯ বছর বলে জানান স্বপ্না রানী । সব মিলে কেমন আছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে যে কষ্ট মনে হতো, এখন আস্তে আস্তে তা সহনীয় হয়ে গেছে, তার সংসারের কিছুটা পরিবর্তন আসায় তিনি এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন মনে করেন। তিনি কর্ম করে খেতে ভালোবাসেন এবং সবাই তার এ পেশাকে যেন শ্রদ্ধার চোখে দেখেন -এমনটাই প্রত্যাশা করেন জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সৈনিক শ্রীমতি স্বপ্না রানী।