আলী সোহেলঃ উৎসবের আমেজ ধান কাটা শুরু হয়েছে কিশোরগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায়। তবে ভৈরব উপজেলার খলাপাড়া ও লুন্দিয়া গ্রাম দুটির চিত্র ছিল ভিন্ন। সেখানে ছিল না কোন উৎসবমুখরপরিবেশে। কারণ, গ্রাম দুটি ছিল পুরুষশূন্য। গত ১৭ এপ্রিল গ্রাম দুটিতে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন দুজন এবং আহত হন দুই গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। এই ঘটনায় থানায় মামলা হলে গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে দুই গ্রাম। অবশেষে গ্রামে ফিরলেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে পুলিশের পাহারায় ধান কেটে ঘরে তুলছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকাল থেকে পুলিশ পাহারায় শুরু হয়েছে ধান কাটা। পুলিশ পাহারায় ধান কাটা উৎসবে মেতেছেন গ্রাম দুটির কৃষকেরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমির ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলেছেন তারা। আর তা অব্যাহত থাকবে পাকা ধান জমিতে অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহিন বলেন, দুই গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। তবে যারা মামলার আসামি নন, তাদের ভয় নেই। জমিতে পাকা ধান থাকা পর্যন্ত পুলিশ উপস্থিত থেকে কৃষকের ধান কাটতে সহযোগিতা করবে। ভৈরব থানার পক্ষ থেকে পুলিশ এলাকায় মাইকিং করে জানিয়েছে, মামলার আসামি ছাড়া কোনো নিরীহ মানুষকে পুলিশ গ্রেফতার বা হয়রানি করবে না। তাই যাদের জমির ধান পেকেছে, তারা যেন ধান কেটে ফেলেন। প্রয়োজনে পুলিশ কৃষকদের নিরাপত্তা দিয়ে পাকা ধান কাটার ব্যবস্থা করে দেবে।গতি শুক্রবার পুলিশের উপস্থিতিতে প্রায় ১৫ হেক্টর জমির ধান কেটেছেন গ্রামের কৃষকেরা। পুলিশ আরও জানায়, ধান কাটা না হওয়া পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তায় প্রতিদিন ধান কাটা অব্যাহত থাকবে।
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, উপজেলা কৃষি অফিস জানতে পারে যে, খলাপাড়া ও লুন্দিয়া গ্রামে বোরো ধান পেকেছে। কিন্তু সংঘর্ষের ঘটনার পর গ্রাম দুটি পুরুষশূন্য হয়ে যায়। এমন খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ভৈরব থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ পাহারায় ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়। এই দুই গ্রামে এবার প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। বর্তমানে জমির অধিকাংশ ধান পেকেছে। গতকাল আমি নিজে উপস্থিত থেকে প্রায় ১৫ হেক্টর জমির পাকা ধান কাটার ব্যবস্থা করেছি।
উল্লেখ্য যে, গত ১৭ এপ্রিল উপজেলার খলাপাড়া ও লুন্দিয়া গ্রামে ধানমাড়াইকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হন এবং আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। সংঘর্ষের সময় ও পরে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এই ঘটনায় উভয়পক্ষ’ই ভৈরব থানায় পাঁচটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ৭০০ জনকে। মামলা হওয়ার পর থেকে গ্রেফতার ভয়ে দুই গ্রামের মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।