মোহাম্মদ তাজুল ইসলামঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের ডোমবাড়ি চালা এলাকায় এক প্রতিবন্ধী যুবক কিস্তির টাকা দিতে না পেরে বিষপানে আত্নহত্যার ঘটনা ঘটে।শনিবার (১ মে) শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়ন ডোমবাড়ি চালা এলাকার মোঃ মোতালিব মিয়ার ছেলে রুবেল (৩৫) নামক এক প্রতিবন্ধী যুবক, ময়মনসিংহ, ভালুকা, মাস্টার বাড়ি শাখার ‘পিদিম’ নামক একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা থেকে ২২ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে ঋণ নেয়। নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধের কথা থাকলেও অভাব অনটনের সংসার, এদিকে করোনা কালিন লকডাউন এর কারণে কাজ করতে না পাড়ায় রুবেল কিস্তি দিতে হিমসিম খাচ্ছিলো, নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ তার জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছিলো।
প্রতি মাসের মতো এই মাসেও কিস্তি দেওয়ার কথা রুবেলের। কিন্তু প্রতিবন্ধী ঐ যুবক কোনো কাজ করতে না পারায় কিস্তি যোগার করতে অক্ষম হয়ে পরে, এমতাবস্থায় এনজিও’র লোকজন সকাল-বিকাল তার বাড়িতে এসে কিস্তি জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু রুবেল কোন অবস্থাতেই কিস্তি সংগ্রহ করতে না পারায়, লজ্জায় নিজ বসত বাড়ির পূর্ব ভিটার ঘরে বিষপানে আত্নহত্যা করে।রুবেলের স্ত্রী সেলিনা খাতুন জানান, আমার স্বামী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে কোনো প্রকার কাজ কর্ম করতে পারেনা। আমাদের ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। তাই অভাবের মধ্যে সংসারের প্রয়োজনে ‘পিদিম’ নামক এক এনজিও থেকে ২২০০০ টাকা উত্তোলন করি। প্রতিমাসে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের কথা থাকলেও অভাবের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এনজিওর লোকজন আমাদের বাসায় এসে কিস্তির জন্য তাগাদা দিতে থাকে ও নানাধরণের কথাবার্তা বলে।
এনজিওর লোকজন বাড়ি থেকে যাবার পর দুঃখ কষ্টে আনুমানিক ১২ টার দিকে আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশের ঘরে গিয়ে বিষপান করে পশ্চিম পাশের ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তার গংড়ানির শব্দ পেয়ে আমি ঘরে যাই। গিয়ে তার অবস্থা খারাপ দেখে ডাক চিৎকার শুরু করি। পরে লোক জন আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার তাকে ওয়াশ করে অবস্থা খারাপ দেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুপুর ২টার দিকে ভালুকার কাছাকাছি গিয়ে মারা যায়।
এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার জনাব তারেক হাসান বাচ্চু জানান,আমার ১নং ওয়ার্ডের ডোমবাড়ি চালা এলাকার মোঃ মোতালিব মিয়া’র ছেলে রুবেল পিদিম নামে একটি এনজিও (ভালুকা,স্কয়ার মাস্টারবাড়ী শাখা) থেকে মাসিক কিস্তিতে কিছু টাকা আনে। নিয়মিত সে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলো না বলে ‘পিদিম’ এনজিওর কর্মকর্তারা সকাল- সন্ধায় বাড়িতে এসে তাকে কিস্তির জন্য চাপ দেয়।কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ও তাদের চাপের কারণে লজ্জায়, অপমানে আজ সকালে বিষপান করলে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার পূর্বে মরহুম রুবেল ২ছেলে ও ১মেয়ে রেখে যান। তিনি আরও জানান মোতালিবের ৬ ছেলের মধ্যে রুবেল ৫ম।