রিপন কান্তি গুণঃ
“চৈত্রের ঝড় হয়ে লুটিয়ে পড়বো আমি বৃক্ষপত্রে, ধু-ধু মাঠে,
মঠের গম্বুজে ।
বায়ুর ভিতর থেকে গ্রহণ করেছি আয়ু ।
জানি, একদিন বায়ুতেই যাবো মিশে ।
কবির লিখা লাইন সমুহ থেকে গাঁয়ের প্রকৃতির কিছুটা স্নিগ্ধতার ছোঁয়া পাওয়া যায় । দেখা মিলবে, কবির শৈশব কাটানো গ্রামের কিছু খন্ড চিত্র । নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায় অবস্থিত কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মভূমি কাশবন গ্রামে। কাশবন নামের পেছনেও ছোট্ট একটি গল্প জড়িয়ে আছে, যা কবির লিখা থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি-কবির ভাষায়, “আমার একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম ছিল, তার নামটিও ছিল ভারী সুন্দর “কাশতলা” হয়তো এক সময় কাশফুলের খুব প্রাচুর্য ছিল ঐ গ্রামে। আমি কবিত্ব করে, তার নাম পাল্টে রেখেছিলাম কাশবন। ভালোবেসে প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার নাম পাল্টে রাখে, সে-ই আমার প্রথম কবিতা…।”
গ্রামের বুক ছিঁড়ে চলেছে আঁকা-বাঁকা পিচঢালা পথ। পথের, দু’পাশ সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো। কৃষকের কষ্টে বুনা ফসলের, সবুজ মাঠ। পথে চলতে চলতে রাস্তার পাশে শূর তুলে স্বাগত জানাবে, কবির ইচ্ছায় নির্মিত একটি ছোট্ট হাতির প্রতিমূর্তি। রাস্তার পাশেই-“কাশবন বিদ্যানিকেতন”। বিদ্যালয়ের সামনেই রয়েছে- কবি নজরুল এবং স্যার আইজ্যাক নিউটনের ভাস্কর্য । কিছু দূর এগিয়ে গেলে কবির বাড়ির মুল ফটক। বাড়ির মূল ভিটায় টিনশেডের পুরাতন বসতঘর ( যে ঘরে কবি বাড়ী গেলে থাকেন ) বাড়ির সামনে কবির ঠাকুর’দার নামে রয়েছে রামসুন্দর পাঠাগার। বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে সেখানে।
পাঠাগারের সামনে, কবির নিজ উদ্যোগে শানবাঁধানো ঘাটসহ খনন করা সুখেন্দু সরোবর এবং পিছন দিকে কামিনী সরোবর নামে দুটি স্বচ্ছ পানির পুকুর। পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায় বসার জন্য রয়েছে পাকা বাধানো বেঞ্চ। বেঞ্চে বসে পরন্ত বিকেলে স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মেখে, বাতাসে ঢেউ খেলানো সবুজ ফসলের মাঠের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় । বাড়ির আঙিনায় রয়েছে, মাইকেল মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং শহীদবেদি।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য রয়েছে “বীরবরন মঞ্চ”। বাড়ির মধ্যে রয়েছে কবির ২ (দুই)- মায়ের নামকরণে বীণাপাণি-চারুবালা সংগ্রহশালা, যা মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সেখানে, দেখা মিলবে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির পুরস্কারেরক্রেস্ট, সনদ, চিঠি, উপহারসামগ্রী, পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি, দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু।
দেখা মিলবে কবির ঠাকুর’দা এবং বাবার নামে সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা, যেখানে গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় শিখছে চিত্র আঁকা। সংগীত চর্চার জন্য রয়েছে “শৈলজা” সংগীত ভবন।কবির বাড়ির পিছন দিকে আদিবাসীদের একটি পাড়া রয়েছে, যেখানে সারাদিন জুড়ে বাঁশ-বেতের বিভন্ন জিনিস তৈরি করে। কবির নিজ উদ্দোগে তৈরি করা হয়, সর্বজনীন শ্মশানঘাট যেখানে নিজ পরিবার এবং গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের সৎকার করা হয় ।