মেহেদী হাসানঃ শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া (হাইটাপাড়া) গ্রামে গড়ে উঠেছে তাত কুটির। যেখানে চাহিদা সম্পন্ন উন্নত মানের জামদানী শাড়ীর পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে টু পিছ কাপড়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কারিগররা তাদের সুনিপুন হাতে ফুটিয়ে তুলছে বিভিন্ন রংয়ের নানা ডিজাইনের এসব কাপড়।
এবিষয়ে সাথে কথা হয় চরশেরপুর তাত কুটিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মোঃ কামরুলের (৩৫) সাথে তিনি ওই এলাকার আমীর হামজার (৬০) ছেলে। কামরুল জানান, বিগত ২০০০ সালের দিকে কাজের সন্ধানে ঢাকা রওনা হই। কোন আন্তীয় না থাকায় উঠি নারায়ণগঞ্জ ফুপুর বাড়িতে। সেখানেই একটা তাত কলে চাকরি নেই। এরপর কাজ শেখার একপর্যায়ে চিন্তা করি নিজের এলাকায় গিয়ে এই কাজ করবো। তাই ২০০৭ সালে শেরপুরে ফিরে এসে একটা তাত দিয়ে জামদানী শাড়ী তৈরির কাজ শুরু করি। এরপর ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত চরম হতাশায় ভুগি। বারবার ব্যাগ গুছিয়েছি যে পুনরায় ঢাকা চলে যাব। কিন্তু পরে আবার নিজে নিজেকেই শান্তনা দিয়েছি, হার মানা চলবে না। যাই হোক বর্তমানে আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি। বিগত ২০০৭ সালে আমার পুজি ছিল মাত্র ১৭ হাজার টাকা। বর্তমান ২০২১ সালে আমার মোট পুজি ১০ লক্ষের অধিক। কামরুর আরও জানান, এখন আমার ছোট বড় মিলিয়ে ১৬ টি তাত মেশিন। যেখানে নারী পুরুষ মিলিয়ে ১৬ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছে।
স্থানীয় তাত কারিগর গোলাম মাওলা বলেন, কলেজ পাশ করে বেকার হয়ে এদিক সেদিক ঘুরতাম। আমাদের গ্রামে কামরুল ভাই তাত মেশিন নিয়ে আসার পর উনার কাছে কাজ শিখি। এখন যা বেতন পাই আলহামদুলিল্লাহ।স্থানীয় আরেকজন তাতী রমজান ইসলাম বলেন, বাবা একজন দরিদ্র কৃষক ছিলেন। পরিবারের সব খরচ তিনি একা বহন করতে হিমশিম খেতেন। কামরুল ভাইয়ের কাছে দীর্ঘ ৫-৬ বছর কাজ শিখে এখন নিজেই কাপড় বুনতে পারি। মাস শেষে ১০ হাজার টাকা বেতন পাই। যা দিয়ে মা-বাবা নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি।
মহিলা তাত কারিগর ইয়াসমিন বলেন, আমরা গ্রামের মহিলাদের অনেক নিয়ম মানতে হয়। পরিবারের অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে কোথাও যাওয়া যায় না। এছাড়া গৃহস্থালি ও সন্তান সামলাতে হয়। কামরুল ভাই তাত মেশিন এলাকায় নিয়ে আসলে আমরা অনেক মহিলারা ও নিজ উদ্যেগে তাতের কাজ দেখি। এরপর কামরুল ভাইকে অনুরোধ করলে তিনি আমাদের বাড়ির ভিতরে কয়েকটি তাত মেশিন স্থাপন করে দেন। এতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিজ বাড়িকে পর্দার ভিতর থেকে কাজ করতে পারি।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউপি চেয়াম্যান আনোয়ার হোসেন সুরুজ বলেন, কামরুলের তাতের খবর এখন শেরপুরের সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই তাত নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূদুর প্রসারী চিন্তা ভাবনা করছেন। গত কদিন আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কামরুল সহ তার সকল তাত কারিগর নিয়ে ডিসি একটা মিটিং ও করেছে। আমার কোন সহযোগীতা লাগলে আমি সব সময় করতে প্রস্তুত।