জাহিদুল ইসলাম নিক্কন: পাবনার শালগাড়িয়ায় যুবদল নেতা শাহজাহানকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সবুজ আলী জানান, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় শালগাড়িয়া গোরস্থানপাড়ার মোঃ তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শাহজাহান আলী (৪০) শহরের শাপলা প্লাস্টিক মোড় থেকে নিখোঁজ হয়।
এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন পহেলা এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি নিখোঁজের জিডি করে। এরপর গত ৫ এপ্রিল দুপুরে আটঘরিয়া থানা পুলিশ উপজেলার গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন আবুল কাসেমের বসতবাড়ীর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতর থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। এ খবর পেয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন মৃতদেহটি শাহজাহানের বলে দাবী করে।পরে এ বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিকটিমের ভাই মোঃ আব্দুল গফুর এজাহার দায়ের করলে পাবনা সদর থানায় হত্যা মামলা নং ১৫, তারিখ-০৭/০৪/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উক্ত মামলাটি পিবিআই, পাবনা গত ১০/০৪/২০২১ খ্রিঃ প্রাপ্ত হয়ে তদন্ত শুরু করে। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সবুজ আলী এবং সোহেল হোসেন মাঠে নামেন।পিবিআই এর পুলিশ সুপার ও তদারককারী কর্মকর্তা মোঃ ফজলে এলাহীর নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১১ এপ্রিল সকাল ৬টার দিকে একটি চৌকস টিম হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত আসামি আটঘরিয়া উপজেলার ডেঙ্গারগ্রামের তায়েজ প্রামানিকের ছেলে মোঃ ইব্রাহীম প্রাং (২৮) পলাতক অবস্থায় ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন সবুজবাগ এলাকা হতে গ্রেফতার করে।পরকিয়া ও অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করে মামলার ভিকটিম ও যুবদল নেতা শাহজাহান আলীর সাথে পাবনা শহরের জনৈক এক নারীর সম্পর্কের টানাপোড়ন চলতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইব্রাহীম প্রাং জনৈক ওই নারীর নিকট আত্মীয়। ভিকটিম শাহজাহানকে হত্যা করার জন্য ওই নারী এবং মোঃ ইব্রাহীম প্রাং এর সহায়তা প্রার্থনা করে এমতাবস্থায় ঘটনার দিন গত ৩১মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পূর্ব নীল নকশা অনুযায়ী ওই নারী ও অন্যান্য আসামীগণ পরষ্পর যোগসাজস করে একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সু-কৌশলে শাহজাহানকে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর গ্রামস্থ মোঃ ইব্রাহীম প্রাং এর নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে হত্যার উদ্দেশ্য অপহরণ করে নিয়ে যায়।উক্ত বাড়ীতে ওই নারী ও আসামীসহ অন্যান্য আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খাবারের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে শাহজাহানকে খাওয়ায়।
ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত খাবার খেয়ে শাহজাহান আলী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে ওই নারী ও মোঃ ইব্রাহীমসহ অন্যান্য আসামীগণ পরষ্পর যোগসাজস করে শাহজাহানকে ঘুমন্ত অবস্থায় হাত-পা বেধে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একপর্যায়ে তারা লাশ গুম করার উদ্দেশ্য বস্তাবন্দি করে গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মোঃ কাসেমের বসতবাড়ীর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখে।পরে আসামী ইব্রাহীম প্রাং ঢাকা পালিয়ে যায় এবং অন্যান্য আসামীরা যার যার মতো অন্যত্র পালিয়ে যায়।গ্রেফতারকৃত মোঃ ইব্রাহীম প্রাংমানিককে ১২ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সে বিজ্ঞ আদালতে মামলার ভিকটিম শাহজাহানকে অপহরণপূর্বক হত্যা করে লাশ টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতরে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে এবং অন্যান্য আসামীদের নাম প্রকাশ করেছেন বলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান। পলাতক আসামীদেরকেও গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।