আমিরুল হকঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের মৌসুমে আড়তদাররা ধান না কেনায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। অনেক আড়তদারই বর্তমানে ধান কিনতে চাচ্ছেন না আবার অনেকে কিনতে চাইলেও ধানের দাম কম বলছেন।
এতে করে ঈদের আগে যে ধান ৯০০ থেকে ৯৪০ মন বিক্রি হয়েছিল এখন সেই ধান কমে সাড়ে ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ধানের এমন দাম কমায় উৎপাদন খরচ উঠা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন কৃষকরা, এটিকে আড়তদারদের কারসাজি বলে মনে করছেন তারা।
চলতি মৌসুমে প্রচুর নতুন ধান উঠছে। বোরো মৌসুমের ধান বেশি রাখা যায় না। এদিকে আড়তদাররা ধান কিনছেন না। ভালো দাম পেলে কৃষকরা এবার লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। প্রথমের দিকে ধানের দাম ভালোই ছিল কিন্তু এখন হঠাৎ করে ধানের দাম কমে গেছে। এতে করে লাভ দূরে থাক উৎপাদন খরচ উঠানো
নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরোর ব্যাপক ফলন হয়েছে। তিনি তিন বিঘা জমিতে বিআর-২৮ ধান আবাদ করে বিঘাপ্রতি ২০-২২ মণ ফলন পেয়েছেন। কিন্তু বাজারে দাম না থাকায় শ্রমিকের হাজিরা, কীটনাশক ও সারের দোকানের বাকির টাকা দিতে পারছেন না।
আবার শ্রমিক সংকট তো লেগেই আছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে খরচ হয় প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা। সেই টাকা এখন পাবেন কোথায়। আমরা ধান নিয়ে আড়তদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। বোতলাগাড়ির পাঠানপাড়ার কৃষক বিধান চন্দ্র রায় বলেন, এটা আড়তদারদের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে হঠাৎ করে ধানের দাম কমে যাবে?
তারা সিন্ডিকেট করে ধান ক্রয় বন্ধ রেখে ধানের দাম কমাচ্ছেন। যদি তাই না হবে, মোকামে ধান ক্রয় বন্ধ থাকলে তাহলে সকলেই ধান ক্রয় বন্ধ রাখতো কিন্তু অনেকে ধান ক্রয় বন্ধ রাখলেও কেউ কেউ ধান ক্রয় করছেন। কিন্তু তারা আগের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিনছেন আর গুদামে মজুদ করছেন।
খাতামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল সরকার শ্রমিক সংকটের বিষয়ে জানান, এখন অনেকেই শহরে রিকশা, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, অটোরিকশা চালিয়ে আয় রোজগার করছে।
এছাড়া সৈয়দপুরের উপকন্ঠে উত্তরা ইপিজেড কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাহলে কেন তারা পরের জমিতে হারভাঙা পরিশ্রম করতে যাবে। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম বলেন, সরকারি ধান ক্রয় শুরু হয়েছে। এতে কৃষকরা সরাসরি ধান দিয়ে লাভবান হবেন। এরপরেও কৃষকের যে অভিযোগ, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমাচ্ছেন- এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রমান পাওয়া গেলে প্রশাসন দ্বারা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।