কুড়িগ্রামে গত ৭২ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে খোস-পাঁছড়া-চুলকানি জাতীয় পানিবাহিত রোগ। এদিকে সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ঢাকাগামী একমাত্র সড়কের দুধকুমার নদীর উপর নির্মিত সোনাহাট সেতুটি মেরামতের জন্য ৫ দিনের জন্য সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃষ্টিপাত কমলেও সীমান্তের ওপার থেকে আসা উজানের ঢলের পানি অব্যাহত থাকায় বিপাকে পড়েছে জেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বন্যা দূর্গত এলাকার মানুষ, কয়েকটি ইউনিয়নে পানি নামতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত চর্ম রোগ, ঘরে ও বাইরে হাঁটু সমান কাদায় ভরে গেছে । তুলনামূলক উঁচু স্থান গুলো থেকে পানি কিছুটা নেমে যাওয়ার পরেও দুধকুমর, ফুলকুমর, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা সহ জেলার প্রায় সবকটি নদ-নদী দিয়ে উজানের ঢলে আসা পানিতে এখনো নিমজ্জিত রয়েছে হাজার হাজার পরিবার।
গবাদি পশু নিয়ে তুলনামূলক উঁচু স্থানে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ, পানিবন্দি নয়টি উপজেলার বন্যা দুর্গত লোকজন বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন । ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বানভাসি মানুষেরা। বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র হয়ে উঠছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও। পানি নেমে যাওয়ার পরেও নতুন সংকটে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বন্ধ রয়েছে তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বানভাসি মানুষেরা। বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র হয়ে উঠছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও। পানি নেমে যাওয়ার পরেও নতুন সংকটে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বন্ধ রয়েছে তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৯ উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থল বন্দর থেকে ঢাকা অভিমুখী সড়কটিতে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাটেশ্বরীতে অবস্থিত সোনাহাট ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কুড়িগ্রামের সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এসময় মেরামত কাজ চলবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে থেকে ২৮ জুন মঙ্গলবার ভোর ৬ টা পর্যন্ত ব্রিজের উপর দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। স্থল বন্দর সাথে কুড়িগ্রাম ও ঢাকার সংযোগকারী একমাত্র সড়কটিতে অবস্থিত ব্রীজটিতে এ সময় ঢাকা থেকে স্থল বন্দর অভিমুখে এবং স্থল বন্দর থেকে মালামাল বোঝাই যানবাহন ঢাকা অভিমুখে যেতে পারবেনা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থল বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কারক সমিতির সভাপতি বলেন, স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার এই ব্রীজটির সংস্কার কাজ করা হয়েছে, তখন দিনে মালামাল পরিবহন করা গেলেও রাতের বেলা সংস্কার কাজ চলছিল তাতে স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে কোন ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি, এবারেও তেমনটা করা উচিত। কারণ সামনে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ, স্থল বন্দর এর সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানিকারক, স্থল বন্দরে কাজ করা শত শত শ্রমিকের পরিবারের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগকে পড়বে,ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য এটা এক অশনী সংকেত হয়ে দেখা দেবে। আমরা এরূপ ৫ দিন স্থায়ী বন্ধের তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা চাই আগে যেভাবে ব্রিজের মেরামত কাজ হতো রাতের বেলায় ঠিক এখনো ভাবেই হোক। কারণ প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১২০ গাড়ি পণ্য স্থল বন্দর থেকে ব্রিজের উপর দিয়ে ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যায় তদ্রূপ বাংলাদেশ থেকে ২০ থেকে ২৫ টি গাড়ি এক্সপোর্ট কৃত পণ্য নিয়ে এই ব্রীজের উপর দিয়ে সোনাহাট স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে। সুতরাং এতে যে পরিমান ক্ষতি হবে তা বলার মত নয় তবে আনুমানিক একটি ধারণা দেয়া যেতে পারে তাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক কোটি টাকার উপরে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজটির মেরামত করতে গেলে এ ৫ দিনে আমদানি রপ্তানি শুল্ক ও সরকারের রাজস্বেও ক্ষতি হবে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পূর্বের মত দিনের একটি সময়ে ব্রিজ মেরামতের সুযোগ নেই এ কারণে যে, ব্রীজের প্লেটগুলো আগের থেকে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে, এছাড়াও ১০ টনের একটি ট্রাকে পাথর বোঝাই করলে প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ টনের মত ওজন হয়ে যায়, এ অবস্থায় চলতে দিলে তাতে যেকোনো সময় বড় আকারের কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সেই দুর্ঘটনার দায় দায়িত্ব কে নেবে? সেই সমূহ দুর্ঘটনা এড়াতেই মূলত আমরা পাঁচ দিন ব্রীজটি সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আশার কথা হলো, নির্ধারিত দিনের পূর্বেই সংস্কার কাজ শেষ হয়ে গেলে সাথে সাথে চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।