শনিবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. অলৌকিক
  3. আইন আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. আলোচিত
  7. কবিতা
  8. করোনাভাইরাস আপডেট
  9. ক্যাম্পাস
  10. খেলাধুলা
  11. গনমাধ্যম
  12. চাকুরী
  13. জাতীয়
  14. ডেস্ক রিপোর্ট
  15. ধর্ম

বাল্যবিয়ের পর বিচ্ছেদ, স্কুলে ফিরেও আবার বাধার মুখে

প্রতিবেদক
এইচ এম ওবায়দুল হক
ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ ৪:১৯ অপরাহ্ণ

মৃত্যুঞ্জয় রায় অপূর্বঃ আমরা গ্রামের ছেলে মেয়ে গ্রামের ছায়ায় বড় হয়েছি। বিশেষ করে মহামারি করোনার প্রকোপ যখন বেশি তখন বেশি পরিমাণেই ঘটতে দেখা গেছে বাল্যবিয়ে। মহামারির সেই ধাক্কা এখনো রয়ে গেছে। তাই বাল্যবিয়ের মতো ঘটনা সচারাচর চোখে পড়েছে। আমার প্রতিবেশি একটি মেয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সেই মেয়েটি গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তাকে প্রায় দেখা যেত গ্রামের ছায়া তলে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।  হঠাৎ একদিন জানতে পারি, তার বিয়ে হয়ে গেছে। যে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে সেই নিজেও মাত্র একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল! বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পাঁচ মাস পর ওই মেয়ের সঙ্গে সেই ছেলেটার বিচ্ছেদ হয়। কারণ ছেলেটা ছিল মোটেও ভালো না। ছেলেটা ছিল নেশায় মগ্ন থাকা একটা পাগল। দিন রাত নেশা করত আর ঘুমিয়ে থাকতো। মেয়েটা কিছু বললেই পাশবিক নির্যাতন করতো মেয়েটার উপর। মেয়েটা সহ্য না করতে পেরে চলে আসে বাবার বাড়ি।
সে প্রথম থেকেই এই বিয়েতে অসম্মতি দিয়ে আসছিল মেয়েটা। কিন্তু তার আপত্তিতে কোনো কাজ হয়নি।  তার পরিবারের কাছে এটা অস্বাভাবিক কিছুই না। তাদের কাছে এটা এক ধরনের অর্জনের মতো, যে অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। তার পরিবার এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন যে তারা বিশ্বাস করে, পড়াশোনা শেষ করতে করতে বয়স বেড়ে যায় তখন আর বিয়ে হবে না। যৌতুক বেশি পরিমাণে দিয়ে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এই বিয়ে বেশিদিন টিকেনি। বছর না পেরোতেই পারিবারিক কলহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাদের। স্কুল পড়ুয়া একটা মেয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের বোঝাও নিচ্ছে! ভাবা যায় কতটা অমানবিক একটা পরিস্থিতি! কিছুদিন আগে জানতে পারি তার বাবা তাকে আবারো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। তবে সে আর স্কুলে পড়তে চায় না। কারণ হিসেবে জানা যায়, স্কুল ও গ্রামে বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে তার মেয়েকে নানা বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। তাই এক আত্মীয়ের সহযোগিতা নিয়ে সেই মেধাবী শিক্ষার্থীকে আবার ও বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়। একাধারে এই বাল্যবিয়ে নষ্ট করছে একটা মেয়ের জীবন, নষ্ট হচ্ছে লেখাপড়া এবং সেই সাথে সাথে বেড়ে যাচ্ছে শিশুশ্রম।
কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বাল্যবিয়ে এবং শহরের বস্তি এলাকায় মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামে দুটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপকালে ১৯ বছরের বেশ কিছু তরুণীকে পাওয়া গেছে, যাদের বয়স ২০২০ ও ২০২১ সালের শুরুতে ১৮ বছরের নিচে ছিল। করোনা মহামারির দুই বছরে ১৫–১৯ বছরের যে ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে তাদের মধ্যে প্রথম বছর (২০২০) বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশের ও দ্বিতীয় বছর (২০২১) বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশের। ২০২১ সালের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২০টি জেলায় ২ হাজার ৮২০ জন কিশোরী-তরুণীর ওপর জরিপ করা হয়। দেশে যে সংখ্যক বাল্যবিয়ের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে তাতে করে আমাদের যুবসমাজ তথা শিক্ষার্থীদের সোচ্চার হওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সভার মাধ্যমে। সেই সাথে সাথে দেশকে বাল্য মুক্ত করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজকে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এদেশের আমলাদের। তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা তথা যুবসমাজ যদি দেশকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার শপথ করি এটা বিফলে যাবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

সর্বশেষ - আলোচিত

Design and Developed by BY REHOST BD