কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রবাসী সেলিম জাহাঙ্গীরকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধে। সেলিম জাহাঙ্গীর উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের হাজারীপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে। আর নাসরিন আক্তার একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে। দুইটি গ্রামই পাশাপাশি। ৮/১০ বছর আগে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক সামাজিকভাবে সেলিম জাহাঙ্গীর ও নাসরিন আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের ঘর আলো করে এসেছে দুই ছেলেমেয়ে। সংসারে নেই কোনো অভাব অনটন। তবুও তাদের সংসার টিকেনি। ছেলের পরিবারের দামী, গৃহবধূ নাসরিন আক্তার স্বামীর কথা শুনত না। মানতনা শাশুড়ীকেও। এমনকি সে একাধিকবার স্বামীর গায়েও হাত তোলার মত ভয়ানক অভিযোগ করেছে প্রবাসী সেলিম জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের সদস্যরা। শুধু কি তাই? শাশুড়ির সাথেও অশ্লীলভাবে দূর্ব্যবহার করতো পুত্রবধূ নাসরিন আক্তার। ছেলে আর মায়ের পবিত্র সম্পর্ক নিয়েও নাসরিন আক্তার অশ্লীল মন্তব্য করেছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, আমি একজন প্রবাসী ব্যবসায়ী। কয়েক বছর আগে আমার বাবা মারা যায়। বাবার মৃত্যুর পর মা-ই আমার সব। তিনিই বাবা, তিনিই মা। মায়ের সাথে কথা বলতে গেলে, গৃহবধূ নাসরিন আক্তার তা সহ্য করতে পারত না। সে আমার ও আমার মায়ের সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য করেছে বহুবার। আমি মায়ের সাথে পরামর্শ করে সংসারের সকল কাজকর্ম করি। এতেই ক্ষিপ্ত হতো নাসরিন। তার চাওয়া— তার স্বামী মায়ের কথা নয়, আমার কথায় চলবে। তার দাবী সে আমার স্বামী। আমার স্বামীর আয়ে সংসার চলে। আমি এমন কথা শুনে আমার স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে বলি— যে মায়ের গর্ভে আমার জন্ম, আমি কিভাবে সে মায়ের অবাধ্য হই?”
প্রবাসী সেলিম জাহাঙ্গীর স্ত্রীকে এমনভাবে বুঝিয়ে শুনিয়েও সংসার টেকাতে পারছিলেন না। শেষমেশ দুই গ্রামের মানুষদের মাধ্যমে ৮/১০ বার সালিসি বৈঠক হওয়ার পরও সংসারের ঝামেলা রয়েই গেল। এমন অবস্থায় যা হবার তা-ই হয়েছে। প্রবাসী সেলিম জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিলেন বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে। ডিভোর্সের পরও সেলিম জাহাঙ্গীরের পরিবার নাসরিন আক্তারের পরিবারের সাথে বসে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করে। শুভপুর ইউনিয়নের হাজারি পাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার জসীম উদ্দিন এক্ষেত্রে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। গত ৮ জুন সেলিম জাহাঙ্গীর আদালতের মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক দেয়। ৭ জুন নাসরিন আক্তারের পরিবারের লোকজন এসে তাকে বাবার বাড়ি যায়। এরপর ২৩শে জুন নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় সেলিম জাহাঙ্গীর, তার ছোট ভাই শামিম ও মা লিলু বেগমকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে ১ ও ২ নং আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী নাসরিন আক্তারকে মারধরের যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে এলাকার বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গের সাথে কথা বলে এ বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি মেম্বার জসীম উদ্দিন বলেন, এটা আমি শুনেছি ছেলে ডিভোর্স দিয়েছে। ৮ জুন ডিভোর্স দেয়। আমি তখন সিলেট ছিলাম। আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স দেয়ার পর আমি এবং আমাদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান মজুমদার সহ স্থানীয়ভাবে বসে সমাধান করার চেষ্টা করেছি। ছেলেপক্ষ রাজী থাকলেও মেয়ে পক্ষ ভেবে দেখি বলে আর সম্মত হয়নি। এখন শুনতে পাচ্ছি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী স্বামী সেলিম জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীকে মেরেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে বলতে পারব না।”
উক্ত ঘটনায় ৫নং শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে ছেলে সেলিম জাহাঙ্গীর এসেছে এবং মেয়েকে ডিভোর্স দেবে বলেছে। আমি বলেছি, ডিভোর্স কেন দেবে? আমি এটা সমাধান করে দেব। আর মেয়ে পক্ষ আসবে বলে আসেনি। এখন শুনছি মামলা হয়েছে। তারা দুই পক্ষ সম্মত হয়ে আমার কাছে আসলে আমি সামাজিকভাবে সুন্দর একটি সমাধান করার চেষ্টা করতাম।”
মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আরিফ হোসেন বলেন, “চৌদ্দগ্রাম থানায় নাসরিন আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি এখন তদন্তাধীন।” মামলায় উল্লেখিত মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাদী মামলার সাথে হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ড সংযুক্ত করেছে। ডাক্তারের সার্টিফিকেট হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।”
সেলিম জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে এবং মারামারির ঘটনায় সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, “বিষয়টি আমি দেখব। এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”