আহমদ মালিকঃ সিলেটের ওসমানীনগরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় শুধুমাত্র দপ্তরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। এদিকে,অভিভাবকরা বলছেন, টাকা আত্মসাতে প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র দপ্তরিকে বলিরপাঠা বানানো হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার গোয়ালাবাজার পাটুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০৯ জন উপবৃত্তিধারী শিক্ষার্থীর ২০২০ সালের (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬ মাসের টাকা অভিভাবকদের মোবাইলে এসে জমা হয়। নগদ একাউন্টে টাকা জমার পরপর বিদ্যালয়ে কর্মরত দপ্তরি আখতার হোসেন শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভুল বুঝিয়ে অভিভাবকদের মোবাইলের একাউন্ট থেকে উপবৃত্তির টাকাগুলো নিজ একাউন্টে ট্রান্সপার করেন। পরে কাউকে অর্ধেক আবার কাউকে না দিয়েই কয়েক হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ১৬ জুন বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ সময় দপ্তরি আখতার হোসেন নিজের দোষ স্বীকার করে উপস্থিত অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমানের প্ররোচনায় তিনি এই কাজটি করে আসছেন। প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্যগণ তখন তড়িঘড়ি করে আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপময় দাশ চৌধুরী ও ছানাউল হক সানিকে নিয়ে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ২১ জুন ঘটনায় খতিয়ে দেখতে পাটুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় তদন্ত কমিটি। এ সময় অভিভাবক ও এলাকাবাসী উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান জড়িত বলে জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে,পাটুলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতে বিদ্যালয়ের দপ্তরির পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকও জড়িত দাবি করে গত ২৩ জুন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।পাশাপাশি তারা প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমানের অতীতের নানা অনিয়মও তুলে ধরেন। এদিকে, উপবৃত্তিধারী শিক্ষার্থীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দপ্তরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বায়েজিদ খান কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা গত ৩০ জুন উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসে পৌঁছায়।এতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন সুপারিশ করা হয়নি।
এ ঘটনায় এলাকার অভিভাবকদের মধ্যে আবারও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। প্রধান শিক্ষককে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এদিকে গত ২১ জুন তদন্ত কমিটি স্কুলে আসার খবরটিও প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের আড়ালে রেখেছিলেন। লোকমুখে জেনে অভিভাবকরা ওইদিন স্কুলে গিয়ে তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলেছেন। এতেই প্রমাণ হয় প্রধান শিক্ষক টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে বাঁচাতে দপ্তরিকে বলিরপাঠা বানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ মো. নেয়ামত উল্ল্যা বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বায়েজিদ খান মহোদয়ের স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা বুধবার বিকেলে আমরা পেয়েছি। এতে পাটুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি আখতার হোসেন কর্তৃক আত্মসাৎকৃত উপবৃত্তির টাকা ফেরত নেওয়াসহ তার চাকুরীর চুক্তি বাতিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত অভিযোগ জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা বিভাগ সিদ্ধান্ত নেবেন।