সোহাগ হোসেনঃ মেহেদী রাঙানো হাত, গহনায় মোড়ানো নতুন সাজে ছয় বেহারার পালকি চড়ে যে নববধুর শ্বশুর বাড়িতে আসার কথা ছিল। সেই নববধু শ্বশুর বাড়িতে ঠিকই এসেছেন তবে পালকি চড়ে নয় ভ্যানে চড়ে স্বামীর লাশ দেখতে। এলাকাবাসী নববধুকে দেখতে নয় দেখতে এসেছে নববধুর স্বামীর মরদেহ। নববধুর দিকে একটুকুও নজর ছিলনা কারোর শুধু কৌতুহল ছিল নববিবাহিত দম্পতির স্বামী বিয়োগ কি ভাবে হলো। এমন দৃশ্য দেখা গেছে শরীয়তপর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের গয়ঘর খলিফা কান্দি গ্রামে।
জানাগেছে, শৌলপাড়া খলিফা কান্দি গ্রামের সেকান্দার খলিফার ছেলে দাদন খলিফা (২৯) মালয়েশিয়া প্রবাসে থাকতেন। প্রায় দেরমাস পূর্বে সে দেশে ফিরে জাজিরা উপজেলার গোপালপুর এলাকার নিশি আক্তার নামে এক কিশোরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের বয়স ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও নববধুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে আনা হয়নি। খুব শীর্ঘই অনুষ্ঠান করে তুলে আনার পরিকল্পনা ছিল দাদনের। সেই লক্ষে প্রস্তুতিও চলছিল। সকল প্রস্তুতি ভন্ডুল করে দিল সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষ।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দাদনকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। পালং মডেল থানা ও নিহতের স্বজনরা জানান, প্রতিবেশী ইদ্রিস খান, শাহজাহান খান গংদের সাথে সেকান্দার খলিফাদের আধিপত্য নিয়ে বিরোধ রয়েছে। গতকাল গয়ঘর খলিফা কান্দি মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে সেকান্দার খলিফার ছেলে দাদন খলিফা তার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ী ফিরছিল। এই সময় পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা দাদনকে রাস্তা থেকে তুলে পার্শ্ববর্তী পাট ক্ষেতে নিয়ে যায়।
সেখানে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। দাদনের আত্মচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষনিক তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় প্রেরণ করে। ঢাকা নেয়ার পথে বাবুবাজার ব্রিজের নিকটে পৌঁছলে এ্যাম্বুলেন্সেই আজ শুক্রবার ভোর সারে চারটায় দাদনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় দাদনের বাবা সেকেন্দার খলিফা বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে আসামী করে পালং মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহতের স্বজনরা আরো জানান, ২৫ বছর পূর্বে সেকান্দার খলিফার বোন দিলুনুরকেও পরিকল্পিত ভাবে এই প্রতিপক্ষরাই কুপিয়ে হত্যা করেছিল বলে দাবী করেন।
নিহতের পিতা সেকান্দার খলিফা বলেন, দুই মাস পূর্বে এসকান্দার সরদার তার পক্ষে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করে। এসকান্দার সরদারের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে তার পক্ষের ইদ্রিস খান, শাহজাহান খান, আবুল খান, আজাহার খান, রশিদ খলিফা, আজিত খলিফারা পরিকল্পিত ভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার দাবী করছি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, নিহতের গায়ে একাধিক আধাতের চিহ্ন রয়েছে। কি ধরণের অস্ত্রের ব্যবহার করে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, ঘটনার পরপর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের পিতা ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামী গ্রেফতারের জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।