মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কথা ছিল না। মানব সমাজ দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সমাজ কাঠামোতে দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা। সৃষ্ট এসব সমস্যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক। দেশের প্রধান প্রধান এসব সমস্যা এবং এবিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো। দেশ,ভাষা ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য ইসলাম পরিপূর্ণ এক জীবন ব্যবস্থা। এই জীবন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো: একটি শাশ্বত, চিরন্তর ও পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এই বিধান সার্বজনীন, যুগোপযোগী ও জীবন্ত। কুরআনুল কারীমের শাশ্বত শিক্ষা, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর অনুপম আদর্শ এবং সাহাবীগণ (রা) -এর অত্যুজ্জ্বল জীবনচার ইসলামের বৈশিষ্ট্য। ইসলামের সার্বজনীনতা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি অসাম্প্রদায়িক চেতনা, অসাধারণ মানবিকতা, অতুলনীয় কল্যাণধর্মী এবং জীবন্ত শাশ্বত ও অন্ততর্মুখী এক জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।
ইসলাম বস্তুবাদী জীবনদশন নয়। ইসলাম মানুষ ও আল্লাহ্র সমগ্য সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করতে শিখায়। ইসলাম মানুষকে আল্লাহ্ ও তাঁর মাখলুখকের সাথে সম্পৃক্ত করে, বস্তুগত ও আধ্যায়ত্মিক সমন্বয় সাধন করে। ইসলামের অপব্যাখ্যা সমাজে কিছু লোক তাদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে সরলমনা জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং প্রতারণা করছে। কখনও কখনও ফতোয়া জারী করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এমনকি আল্লাহ্-রাসূলের বাণীর ব্যাখ্যা করা হচ্ছে মনগড়াভাবে। ইসলামের কোন কোন বিষয়ে এবং চার মাযহাব সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এবং হানাফী মাযহাব সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করে ধর্মীয় সংহতি বিনষ্ট করা হচ্ছে। হাদীসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এত ধর্মীয় বিভেদ-বিশৃঙ্খলা উসকে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিবাদ প্ররোচিত করা হচ্ছে। এত ধর্মীয় শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফতোয়ার অপপ্রয়োগঃ সূ² ও জটিল মাসআলা প্রদানে নিজেদেরকে যোগ্য ও বিশেষজ্ঞ মনে করে আলেম নামধারী বেআলেম কিছু ব্যক্তি তাদের খেয়াল-খুশিতো ফতোয়া প্রদান করে। তারা কুরআন-সুন্নাহর এমন হাস্যকর ব্যাখ্যা দেয় যা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী, আধুনিক ও সমসাময়িক, আলেমগণের ব্যাখ্যার পরিপন্থী। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা নিজেদেরকে খোলাফায়ে রাশিদীন, সালাফে সালেহীন ওও সাহাবাায়ে কিরামের সমপর্যায়ের মনে করে। এসব কুখ্যাত ব্যাক্তিরা স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে অথবা গ্রামের টাউট-বাটপারদের অবৈধ সুবিধা ভোগ করতে ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করে। তাদের জঘন্য কাজের ফলে সমাজে ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। সমাজের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয় এবং সংঘাতময় পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়।
চরম পন্থা ইসলামে নিষিদ্ধঃ চরম পন্থা অবলম্বন ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলাম মধ্যপন্থা অবম্বনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। এজন্য বিশ্বনবী (সা) মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহবান জানিয়েছেন “তোমার সরল পন্থা অবলম্বন করো, চরম পন্থা বর্জন করো, সুসংবাদ দাও এবং ঘৃণা সৃষ্টি করো না” (বুখারী)। “ধর্মে (ধর্মান্তরিতকাণে) জোর জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রাত্ম পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে” (সূরা বাকারা: ২৫৬)। দ্বীন প্রচারের জন্য ভীতি প্রদর্শন ও মানুষ হত্যার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি সম্পূর্ণ হারাম ও ইসলাম বিরোধী।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার কথাবার্তা ও কার্যকলাপের অনিষ্ট থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে” (আবু দাঊদ)। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ধর্মকে কেন্দ্র করে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আহলে কিতাব! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ্ সম্পর্কে নিতান্ত সত্য ছাড়া ভিন্ন কিছু বলো না” (সূরা নিসাঃ ১৭১)।
“বলুন, হে আহলে কিতাব! তোমরা নিজেদের ধর্মে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং এমন সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অকেকে পথভ্রষ্ট করেছে। আর তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে” (সূরা মায়িদা: ৭)। আলোচ্য আয়াত দু’টিতে যদিও আহলে কিতাবকে সম্বোধন করা হয়েছে তবুও এর তাৎপর্য ব্যাপক। এর মধ্যে সকল সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত। সকলকে বাড়াবাড়ি ও গোঁড়ামী বর্জন করতে বলা হয়েছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাঃ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানব প্রজন্মের মর্যাদাহানি করা হয়।
আল্লাহ্ তায়ালা মানব জাতির জন্য কতিপয় মৌলিক অধিকার দান করেছেন। ইসলামে মানবাধিকার অত্যন্ত ব্যাপক। কোন ক্ষুদ্র বিষয়ও এতে উপেক্ষিত হয়নি। ইসলাম বিধৃত মানবাধিকার সার্বজনীন, শাশ্বত, চিরন্তণ ও পূর্ণাঙ্গ। মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম মৌলিক নবাধিকার ঘোষণা করেছে। বিদায় হজ্জের ভাষণে কতপিয় মৌলিক মানবাধিকারের কথা বিধৃত হয়েছে। এছাড়া খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবা (রা)-গণের মাধ্যমে ইসলামে মানবাধিকার পূর্ণ অবয়ব লাভ করে। উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার: জীবনের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, জীবনের মৌলিক মানের অধিকার।
দাসত্ব থেকে মুক্তির অধিকার, সুবিচারের অধিকার, সকল মানুষের সমতার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, মান-ইজ্জতের অধিকার, মতামত প্রকাশের অধিকার অন্যতম। ন্যায়বিচারঃ ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ তথা সাদা-কালো ধনী-দরিদ্রে ভেদাভেদকে স্বীকার করে না। তাই ইসলাম যেমন সর্বত্র আইনের স্বীকৃতি দিয়েছে তেমনি বিচার ব্যবস্থায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে” (মুসলিম)।
“কোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে করো অর্ধ হাত পরিমাণ জমিও দখল করলে নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন সাত স্তর জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে” (বুখারী-মুসলিম)।
“নিশ্চয়ই নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল ঐ ব্যক্তি যে অধীনস্তদেরকে অত্যাচার করে” (মুসলিম)।এভাবে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অন্যায়-অত্যাচারের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বিশদভাবে সর্তক করা হয়েছে। কারণ অত্যাচার থেকে সন্ত্রাস জন্ম নেয়। সুতরাং অত্যাচার সংক্রান্ত এসব বাণীই প্রমান করে যে, ইসলামের সাথে সস্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই।
প্রকৃত মুসলমান সন্ত্রাসী হতে পারি নাঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “মুসলিম সে, যার মুখ এবং হাতের অনিষ্ট থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে” (বুখারী মুসলিম)।
সারা বিশ্বে মানবতার জন্য ইসলাম শান্তির বাণীবাহক। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর পত্রে তাদেরকে লিখেন, “ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তি লাভ করবেন”।
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতিশ্রæতি রক্ষা করা মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব। এই প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ইসলাম গ্রহনকারীদের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করা মুসলমান সমাজের দায়িত্ব। আল্লাহ্ পাক ঘোষণা করেন, “মুমিন পুরুষ এবং মহিলাগণ একে অপরের সহায়ক ও পৃষ্ঠপোষক। তারা ন্যায়সঙ্গত কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” (সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৭১) । “তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও বিনীত” (সূরা আল- মায়িদা, আয়াত: ৫৪)।
“তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। মোতরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনবে” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)।রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “এমন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার দুষ্কৃতি থেকে নিরাপদ নয়” (মুসলিম শরীফ)।
অত্যাচার-অবিচার প্রতিরোধ: হযরত মুহাম্মদ (সা) ছিলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপোসহীন। নবুয়্যাত প্রাপ্তির পরে তো বটেই, পূর্বেও তিনি সর্বোতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন সকল ধরনের সন্ত্রাস নির্মূল করতে। তাই আমরা দেখতে পাই, মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ‘হিলফুল ফুযুল’ সংগঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাস প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ সংগঠনের ১ নং শর্তে বর্ণিত ছিল: “আল্লাহর কসম! মক্কা নগরীতে কারো উপর অত্যাচার হলে আমরা সবাই মিলে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্রাচারিতকে ঐক্যবদ্ধভাবে সাহায্য করবো, চাই সে উঁচু বা নীচু শ্রেণীর, স্থানীয় বা বিদেশী হোক। অত্যাচারিতের প্রাপ্য যতক্ষণ পর্যন্ত না আদায় হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো”।
মুক্তি যুদ্ধ ও ইসলামী চেতনাঃ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এদেশের স্বাধীনতা লাভ করি। এই মুক্তিযুদ্ধ ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুযমের লড়াই। ইসলাম জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাাঁড়াবার শিক্ষা দেয়।মুক্তিযুদ্ধের কোন শ্লোগানে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কথা ছিল না। কিন্তু হানাদার বাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসররা মানবতা বিরোধী অপরাধ ঢাকার জন্য অপপ্রচার করে যে, মুক্তিযুদ্ধ ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে। তাদের এই প্রোপাগান্তা যে মিথ্যা তার প্রমাণ স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কর্তক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং রাশিয়ার মত দেশে তাবলীগ জামাত প্রেরণ।
মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা ইসলাম বিরোধী বলতে অথবা হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় তাদের বিষয়ে আজ আমাদের সোচ্চার হতে হবে। স্বাধীনতা হচ্ছে আল্লাহ্র এক বিরাট নিয়ামত। আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত রাখুন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিঃ ইসলাম মুসলিমগণকে অমুসলিমদের সাথে সদাচার সহানুভূতি, মানবতা ও উদারতা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) -এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন অমুসলিম নাগরিককে কষ্ট দেয়, কিয়ামতের দিন আমি কষ্টদানকারীর বিপক্ষে বাদী হবো। আর আমি যে মোকদ্দমায় বাদী হবো তাতে আমার জয়লাভ অবধারিত” (হাদীস)।অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক অথবা অন্য কারও প্রতি অত্যাচার করতে আমার পালনকর্তা আমাকে নিষেধ করেছেন” (তাফসীর মাআরেফুল কোরআন থেকে, পৃষ্টা১৯৮)। এত প্রতীয়মান হয় যে, একটি মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকগণ আমানতস্বরূপ এবং তাদের পূর্ণ নিরাচপত্তা বিধানের দায়িত্ব ুমসলমানদের।
মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ঃ মদ জাতীয় সকল দ্রব্য ইসলামে সম্পূর্ন হারাম। মহানবী (সা) এ সম্পর্কে বলেছেনঃ “যা বেশি গ্রহণ করলে মাদকতা সৃষ্টি করে তার অল্প গ্রহণ করাও হারাম” (তাহাবী)। বর্তমানে হেররোইন, ইয়াবা, আফিম, ভাং, চরস, ফেনসিডিল, গাঁজা ইত্যাদি নানা রকমের মাদক আমাদের সমাজকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার না করলে জনস্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়বে এবং জাতীয় উন্নয়ন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সকল ¯রে এর বিরুদ্ধে রুখে দাাঁড়াতে হবে। মহান আল্লাহ্ বলেন”“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না” (সূরা নিসা: ২৯)।
এই অনিবার্য ধ্বংস থেকে বাঁচতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে ইমামগণের এবং মিডিয়া কর্তৃপক্ষের আরও জোরদাস ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতও সমাজসেবীদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাথে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য জনগণকে প্রচার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
দুর্নীতিপ্রতিরোধ: দুর্নীতি একটি সামাজিক অভিশাপ। কোন জাতি ধ্বংসের পূর্বে তাদের মধ্যে দুনীর্তি মহামারীর মত বিস্তার লাভ করে থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা এ প্রসঙ্গে বলেন, “যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং তাতে বড় বেশি দুর্নীতি করেছে, তাদের ওপর তোমার প্রভু শাস্তির কষাঘাত হানলেন। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক পর্যবেক্ষণ করছেন”(৮৯:১১-১৪)।
দেখা যায়, বহু লোক ক্ষমতার জোরে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের সাথে সাথে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের হক নষ্ট করে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। দুর্নীতি আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। মহানবী (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জালিয়াতি বা সঠিক তথ্য গোপন করল সে আমাদের সামজভুক্ত নয়” (তাবারী)। “ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহনকারী উভয়ই জাহান্নামে যাবে” (আত-তারগীব)।মহানবী (সা) আরও বলেছেন, “কোন শহরবাসী সিন্ডিকেট করে গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি করবে না” (মুসলিম)।
ভোগ্যপণ্য ভেজাল, অপরের জায়গা জবরদখল, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি নানাভাবে মানুষকে প্রতারণা করা সবই ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে আমাদের সকলের ঈমানী দায়িত্ব।খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্যে ভেজাল: খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্যে ভেজাল দেয়া একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই অধিক মুনফার লোভে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশ্রিত করে বাজারজাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশ্রণ একটি গর্হিতহ কাজ। এটা সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে সংমিশ্রণ করার শামিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “ তোমরা সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না” (২.৪২)।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের প্রভাব খুব মারাত্মক। ভেজাল ও বিষাক্ত খাবারের ফলে অনেকের অকালে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা জীবন হত্যার শামিল। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও বিভিন্ন কসমেটিক, ঔষধ, নির্মাণ সাম্রগী এবং ব্যবহার্য দ্রব্যে ভেজাল দেওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশসহ জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কাজেই আমাদের প্রত্যেককে এ অপরাধ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে তা প্রতিরোধ করতে হবে।
জাতীয় সম্পদের অপচয়ঃ জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের সম্পদের পরিমাণ খুবই কম । কাজেই আমারদের সকল সম্পদ ব্যবহার করতে হবে পরিমিতভাবে। বিশেষ করে গ্যাস , বিদ্যুত, পানি এসব কিছুই ব্যবহার করতে হবে প্রয়োজন অনুসারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দিনের পর দিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা হয় প্রয়োজন ছাড়াই , পানির কল ব্যবহারের পর ঠিকমতো বন্ধ করা হয় ন।।এসব অপচয়ের ফলে সমাজের অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে, গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি থেকে। শুধু তাই নয়, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির নামে বাস, ট্রাক, ভ্যান, গাড়ি, কারখানা ইত্যাদি ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে অনেক জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা হয়। বিশেষত ছাত্র ও রাজনৈতিক দলের কর্র্মীদের দ্বারাই এ গুরুতর অন্যায় কাজটি হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ্ অকারণে সম্পদ বিনষ্ট না করার জন্য মানুষকে সর্তক করে বলেন, “অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই” (১৭:২৭)। “তোমরা খাও, পান কর, তবে অপচয় করো না” (৭.৩১)।
কাজেই সম্পদ অপচয় ও অকারণে বিনষ্ট না করার জন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত একে অপরকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা।বখাটেদের উৎপাত পথে-ঘাটে আসা যাওয়ার পথে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদেরকে উত্যক্ত করা এবং বাজে কথা বলে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই সকল অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ইতোমধ্যে বহু ছাত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। নারী নির্যাতনের এ এক ভয়াবহ চিত্র। অভিভাবকগণ সব সময় উৎকন্ঠায় থাকেন। অনেক মেধাবী ছাত্রী অসময়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এরা কেবল বখাটে নয়, এরা মারাত্মক অপরাধী, এরা নারী নির্যাতনকারী, এরা শিক্ষার শত্রæ, গণমানুষের শত্রæ। তাই প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব হলো এই সকল অনৈতিক তৎপরতার বিরুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেএখনই এর মূলোৎপাটন করা।
শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানঃ মদীনায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সকল ধর্মাবলম্বীর সাথে মহানবী (সা) এক শান্তিচুক্তি সম্পাদন ধর্মপ্রাণ ঈমানদারগণের হাত সমবেতভাবে ঐসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে উত্থিত হবে, যারা বিদ্রোহী হবে অথবা ঈমানদারগণের মধ্যে অন্যায়, পাপাচার, সীমালঙ্ঘন, বিদ্বেষ অথবা দুর্নীতি ও ফাসাদ ছাড়াতে তৎপর হবে। তারা সকলে সমাবেতভাবে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, যদিও সে তাদেরই কারো আপন পুত্র ও হয়ে থাকে”। এ সনদে সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য নি¤œ বর্ণিত ধারাসমূহ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যথা:
ক্স চুক্তিবদ্ধ কোনো সম্প্রদায়ই বাইরের কোন শক্রর সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারবে না; ক্স অপরাধীকে উপযুক্ত শান্তি ভোগ করতে হবে;
ক্স মুসলিম ও অমুসলিম বিভিন্ন সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ব্যক্তিগত ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না ইত্যাদি।
মদীনা সনদ সকল সম্প্রদায় ও ধর্মের জনগণের সহ-অবস্থানের অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । এ সনদে বর্নিত ধারায় সকলের শান্তিপূর্ণভাবে সহ-অবস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।
মুফতি এইচ.এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব)
প্রাবন্ধিক টিভি উপস্থাপক।
প্রতিষ্ঠাতা-কুমিল্লা জিলা মাদ্রাসা।
কো-অর্ডিনেটর:ইয়থ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ,কুমিল্লা জিলা।