মাসুদ রেজাঃএক সময় তাঁতের খট খট শব্দে সকালের ঘুম ভাঙতো সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প এলাকার মানুষের। সিল্কের তৈরি জামদানি শাড়ি, তাঁতের শাড়ী লুঙ্গী গামছা , ওড়না, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় বুননের কাজ চলত সকাল থেকে রাত অবধি।তবে আজ সেই শব্দ শুধু পৌরাণিক গল্প। বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প পল্লী গুলির। অর্থের অভাবে পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
একদিকে রং, সুতাসহ তাঁতশিল্পের সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে দেশের কাপড়ের বাজার ভারতীয় শাড়ির দখলে চলে যাওয়ায় উৎপাদিত কাপড় নিয়ে চরম বিপাকে সিরাজগঞ্জের তাঁত মালিকরা। লোকসানের মুখে পড়ে অনেক তাঁত কারখানা বন্ধ করায় বেকার হয়ে পড়েছেন এ পেশায় জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক।
একসময় দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বেলকুচি, এনায়েতপুর ও উল্লাপাড়া তাঁতপল্লীগুলোতে শুরু হতো তাঁত বুননের ধুম। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলত পাওয়ার লুমও। কিন্তু দফায় দফায় সুতা, রংসহ তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধিতে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁত মালিকদের। পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিকের মজুরিও। সেই সঙ্গে দেশের কাপড়ের বাজারগুলোতে ভারতীয় শাড়িতে সয়লাব হওয়ায় তাঁতশিল্পে উৎপাদিত কাপড়ের চাহিদা কমে গেছে। ফলে অনেক মালিক লোকসানের মুখে বন্ধ করে দিচ্ছেন তাঁত কারখানা।
তাছাড়া গত বছর লকডাউনের শুরুতেই সিরাজগঞ্জের সব তাঁত কারখানা আর কাপড়ের হাট বাজার টানা ৪/৫ মাস বন্ধ ছিলো। এবং পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে ক্ষতিগ্রস্থ তাঁতীরা পুঁজি হারিয়ে ব্যাপক লোকসানের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়ে । সেই ক্ষতি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ের ভরা মৌসুমে এরই মধ্যে ফের লকডাউনে পড়ে সিরাজগঞাজের প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ তাঁতী ও শ্রমিকেরা তাদের জীবন জীবিকার প্রশ্নে চোখেমুখে রীতিমতো সর্ষের ফুল দেখছে। গেলো বছর ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও পুঁজায় এবং চলতি বছরেও পহেলা বৈশাখ ও আসন্ন রমজানের ঈদকে উপলক্ষ করে তাঁতবস্ত্রের বেচাকেনায় মারাত্বক ধ্বস নামায় কোমড় ভেঙ্গে গেছে জেলার সিংহভাগ তাঁতী ও মহাজনদের।
জেলায় তাঁত, পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আর এর সঙ্গে জড়িত ১৫ লাখ শ্রমিক। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে কারিগররা। লাভজনক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।