আলী সোহেলঃ কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পুলিশ কর্তৃক জারিকৃত ১৪৪/১৪৫ ধারা অমান্য করে উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি বায়তুল আমান জামে মসজিদের জায়গা জবর দখল করে দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি বায়তুল আমান জামে মসজিদ উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের মৃত হাজী মো. ফজলুর রহমানের পুত্র স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ মার্চ শনিবার সকাল থেকে দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের মৃত মহব্বত আলী ওরুফে মোহাম্মদ আলীর পুত্র মো. বিল্লাত আলী (৭৫) ও মো. শাহ নেওয়াজ আলী (৫৫) তাদের অন্যান্য ভাই ও সন্তানদের নিয়ে জোর জবর দখল করে দ্বাড়িয়াকান্দি বায়তুল আমান জামে মসজিদের জায়গায় মসজিদের মিম্বর ঘেষে একটি দোকান ঘর নির্মাণ শুরু করে।
এ ঘটনায় তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌরসভার মেয়র, কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ, স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আলেম উলামা পরিষদের সভাপতির নিকট পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগ করে কোন প্রকার প্রতিকার না পেয়ে তিনি বাদী হয়ে গত ১৮ মার্চ মো. বিল্লাত আলীকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নামে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কাঃ বিঃ ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। সি আর মোকাদ্দমা মামলা নং- ৫০২/২০২১। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে ওইদিন ১৮ মার্চ কুলিয়ারচর থানার এ.এস.আই মো. জুয়েল মিয়া দ্বাড়িয়াকান্দি মৌজার ৫০৩ নং দাগের ৭.৭৫ শতাংশের কাত ৭.৫০ শতাংশ মসজিদের নালিশী ভূমিতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৪/১৪৫ ধারা মতে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করেন।
মসজিদের নামে ক্রয়কৃত রেজিষ্ট্রি দলিল মতে দেখা যায়, দ্বাড়িয়াকান্দি মৌজার পুরাতন ৫০৩ নং ও নতুন ১৪৭৭ নং দাগের ২২ শতাংশ ভূমির মধ্যে পৌত্রিক সূত্রে ৭.৭৫ শতাংশ ভূমির মালিকানা হয়ে গত ২৯/০১/১৯৯৪ ইং তারিখ অভিযুক্ত মো. শাহ নেওয়াজ আলী ৪১৬৫ নং দলিল মূলে ৪ শতাংশ ও ২৫/০৩/১৯৯৪ ইং তারিখ ১১৯৫ নং দলিল মূলে ৩ শতাংশ ভূমি এবং তার বড় ভাই অভিযুক্ত মো. বিল্লাত আলী গত ২৫/০৩/১৯৯৫ ইং তারিখ ১১৮৯ নং দলিল মূলে ০০.৫০ শতাংশ, মোট ০৭.৭৫ শতাংশের কাত ০৭.৫০ শতাংশ ভূমি দ্বাড়িয়াকান্দি বায়তুল আমান জামে মসজিদের নামে দলিলমূলে বিক্রি করে দেন। ২২ শতাংশের মধ্যে ১০.৫০ শতাংশ ভূমির মালিক অভিযোগকারী মো. কামরুল হাসান নিজে। বাকী ০৩.৭৫ শতাংশ ভূমির মালিক আব্দুল মন্নাফ। ২২ শতাংশের মধ্যে অবশিষ্ট ০০.২৫ শতাংশ ভূমি অভিযুক্ত মো. বিল্লাত আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ আলী গংদের নামে রয়েছে। মসজিদের নামে মো. কামরুল হাসানের পিতা হাজী মো. ফজলুর রহমান মৃত্যুর আগে গত ১০/১১/২০০৮ ইং তারিখ দ্বাড়িয়াকান্দি মৌজার ৪৯৮ নং দাগ থেকে ০২.০০ শতাংশ ভূমি ওয়াকফ্ দলিল করে দেন। প্রাপ্ত দলিল মোতাবেক দ্বাড়িয়াকান্দি বায়তুল আমান জামে মসজিদের মোট ০৯.৫০ শতাংশ ভূমির মধ্যে আনুমানিক ০৫.০০ শতাংশ ভূমির উপর মসজিদটি নির্মাণ করেন মসজিদ উন্নয়ন কমিটি। এর মধ্যে অবশিষ্ঠ থাকা ০৪.৫০ শতাংশ ভূমিসহ অভিযোগকারী মো. কামরুল হাসানের ১০.৫০ শতাংশ ও আব্দুল মন্নাফের ৩.৭৫ শতাংশ, মোট ১৮.৭৫ শতাংশ ভূমি অভিযুক্ত মো. বিল্লাত আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ আলী জবরদখল করে মসজিদের মিম্বর ঘেষে একটি দোকান ঘর নির্মাণ করে। পরে দোকানে মালামাল ভর্তি করে গত ১৯ এপ্রিল সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোকানটি উদ্বোধন করেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী মো. কামরুল হাসান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্রের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সালাত আদায়ের জায়গা আল্লাহর ঘর। এ ঘরের নামে রেজিষ্ট্রিকৃত ভূমি দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে জোরজবর দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করায় জায়গাটি দখল মুক্ত করতে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বিচার দাবী করলেও স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যাক্তি, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী নিরব ভূমিকা পালন করায় তিনি মর্মাহত হয়ে জবরদখলকৃত মসজিদের জায়গা উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. শাহ নেওয়াজ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘর নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে এবং কামরুল হাসান মসজিদ উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নন দাবী করে বলে, আমাদের জায়গায় আমরা ঘর নির্মাণ করেছি। মসজিদের মিম্বর ঘেষে কেন ঘর নির্মাণ করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাংবাদিকের সাথে ক্ষেপে গিয়ে বলেন, এটা মসজিদের বিষয়, এটা আমাদের বিষয়। এখান থেকে জায়গা নিবে কেডা? এ বিষয়টা আপনার জানার বিষয়টা কি? এ বিষয়টা আপনার জানার বিষয় না। একথা বলার সাথে সাথে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়।
এব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ.কে.এম সুলতান মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক একজন পুলিশ অফিসার দ্বারা উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ওই মসজিদের জায়গায় ১৪৪/১৪৫ ধারা মতে নোটিশ জারি করা হয়েছে। জায়গা জমি সংক্রান্ত বিষয় বিজ্ঞ আদালত দেখেন। এটা থানা পুশিশ দেখেনা। এখন যদি কোন পক্ষ বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ঘর নির্মাণ করে থাকে তাহলে অন্যপক্ষ বিজ্ঞ আদালত থেকে যে নির্দেশ এনে দিবে আমরা সে মতে কাজ করবো।