শাহ জামালঃ কক্সবাজারের পেকুয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ।সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মগনামা ইউনিয়নের সাতঘর পাড়া এলাকার প্রেমিক আবিদের বসতঘরে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। আজমিন সোলতানা মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্লাদিয়ার মৃত আবদুল খালেকের মেয়ে এবং মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। সংবাদ সম্মেলনে তার চাচা আমির হোছাইনসহ আবিদ ও আজমিন সোলতানার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্কুলছাত্রী আজমিন সোলতানা বলেন, আমি ধর্ষিতা নই। ধর্ষণের মত ঘটনা আমাকে নিয়ে সংঘটিত হয়নি। অহেতুক আমি ও আমার দেড় বছরের প্রেমিক নুর আবিদকে নিয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হয়েছে। এটি আমরা প্রেমিক জুটিকে নিয়ে অপপ্রচার। যা ঘৃণিত ও মানহানিকর। আবিদ আমার প্রেমিক। তার সঙ্গে আমার দেড় বছরের মন দেয়া নেয়া চলছে।
গত রোববার আমি নুর আবিদকে খবর দিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই। সেখানে আবিদ ও আমি বাড়িতে ছিলাম। এরপর দেখলাম কিছু অতি উৎসাহী মানুষ আমাদের বাড়িতে এসে এ কান্ড সৃষ্টি করে। আজু মাঝি, হাবিব, চাঁদ মিয়াসহ আরো কিছু মানুষ এসে আমাদের উপর চড়াও হন। পরবর্তীতে আবিদের পরিবার ও আমার পরিবারের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। বৈঠক শেষ হতে না হতেই পুলিশ উপস্থিত হন। কিছু বলার আগেই পুলিশ আবিদ ও আমাকে থানায় নিয়ে যায়।
আমরা পুলিশকে বলেছি এটি আমাদের পারিবারিক ও সম্পর্কের বিষয়। কিন্তু পুলিশ এ সব না শুনে নিয়ে যায় পেকুয়া থানাতে। সেখানে গিয়ে আবিদকে থানা হাজতে ঢুকিয়ে ফেলে। মামলা নিতে পুলিশ তৎপর হন। আমাকে বাদী হয়ে এজাহার দিতে বলছিলেন। আমি কিছুতেই রাজি ছিলাম না। গভীর রাতে আমি ও আমার বড় বোন থানা থেকে চলে আসতে চেয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমার বড় আপা রাতে থানা থেকে বের হন। পুলিশ তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে রাতেই আমরা দুই বোনকে আটকিয়ে রাখে।
একটি কাগজে স্বাক্ষর নিতে পুলিশ আমাকে বার বার তাগিদ দেন। তবে আমি কিছুতেই স্বাক্ষর দিতে চাইনি। এরপর পুলিশ আমি ও আমার বড়বোনকে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করে। মামলাতে সম্মত না হওয়ায় পুলিশ আমরা দুই বোনকে হুমকি ধমকি দেন। পরদিন সকালে আমাকে জোরপূর্বক কক্সবাজারে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। পুলিশের নারী ও পুরুষ সদস্য দুইজনই আমাকে জোর করে কক্সবাজারে পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছে। পুলিশ আমাকে ধর্ষণের পক্ষে স্বীকারোক্তি নিতে বার বার চাপ প্রয়োগ করছিলেন।
ভয়ে আমি কিছু বলেছি। তবে এ গুলো ছিল আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। আমি কোর্টে গিয়ে বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে হাকিমকে বিষয়টি সাজানো ও পরিকল্পিত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছি। আসলে আবিদের পরিবারের সাথে এখানে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে তৃতীয় একটি পক্ষ পুলিশের সঙ্গে হাত মিলায়। তারা পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য মূলত ধর্ষণের মত একটি মিথ্যা তথ্যের অবতারণা ঘটিয়েছে। আমি আমার প্রেমিক নুর আবিদের মুক্তি চাই।
তিনি আরো বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি আমার মনের মানুষটির বিরুদ্ধে আনীত চক্রান্তের প্রতিবাদ জানাতে আপনারা জাতির বিবেক সাংবাদিক মহোদয় গংদের মুখোমুখি হয়েছি। আমি যে বক্তব্য দিয়েছি আপনারা সেটি দেশ ও জাতিকে তুলে ধরবেন। এখানকার বাস্তব চিত্র। আমি একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এ সব কান্ড তৈরী করে তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে সমাজে অসম্মান জানানোর জন্য মূলত ষড়যন্ত্র করছে।
ভুক্তভোগী আজমিনের চাচা আমির হোছাইন বলেন, এটি ষড়যন্ত্রের নিকৃষ্ট উদাহরণ। আমি এখানে উপস্থিত হওয়ায় আমাকেও হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য না দিতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমির হোছাইন আরো জানান, রাতে আমার বাড়িতে ১৫/২০ জন লোক পাঠানো হয়েছে। তারা ধারালো অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে আমাকে তুলে আনতে গিয়েছিল। একজন জনপ্রতিনিধির হুকুমে এ সব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল পেকুয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা রুজু হয়েছে। যার নং ৫/২১। চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণ মামলার বাদী আজমিন সোলতানা। মামলায় নুর আবিদ নামক এক যুবককে আসামী করা হয়েছে। নুর আবিদ মগনামা ইউনিয়নের সাতঘরপাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে। ওই মামলায় নুর আবিদ এখন জেল হাজতে রয়েছে।