শতবর্ষের সাক্ষী সালিশখানা আজ ধ্বংসের মুখে, ইতিহাস বাঁচাতে চান এলাকাবাসী দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ২:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৫ নুর মোহাম্মদ খান ।। নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার শুনই গ্রাম। এর বুকেই দাঁড়িয়ে আছে ন্যায়বিচারের এক জীবন্ত ইতিহাস—চার শতাব্দী পুরনো সালিশখানা। কালের সাক্ষী এই স্থাপনাটি আজ অবহেলায় হারাতে বসেছে তার অস্তিত্ব। স্থানীয়দের ভাষ্যে জানা যায়, মুঘল আমলের সেনানায়ক ঈসা খাঁ’র বংশধর আছালত খাঁ প্রায় চারশ বছর আগে নেত্রকোণা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা এলাকা থেকে এসে স্থায়ীভাবে বসতি গড়েন এই শুনই গ্রামে। তিনি শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তখনকার দিনে থানার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। বিচারকার্য চলত জমিদারি সালিশের মাধ্যমে। সেই প্রয়োজনেই আছালত খাঁ নির্মাণ করেন একটি তিন কক্ষবিশিষ্ট সালিশখানা। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে বসত বিচারসভা। ন্যায়বিচারের আশায় আশপাশের গ্রামের লোকজন ছুটে আসত এই সালিশখানায়। অপরাধের প্রমাণ মিললে ওই স্থাপনাতেই দণ্ড কার্যকর করা হতো। সালিশখানাটি তখনকার সময়ে ছিল জনগণের একমাত্র বিচারব্যবস্থা এবং ন্যায়বিচারের প্রতীক। কিন্তু সময়ের স্রোতে সব বদলে গেছে। আধুনিক থানা-পুলিশ এসেছে, মানুষ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছে। আর সেই সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে চার শতকের ইতিহাস। এখনকার সালিশখানাটি জরাজীর্ণ। ইট ভেঙে পড়ছে, দেয়ালে জং ধরা ইতিহাস। অথচ এটিই একসময় ছিল এলাকার বিচারকেন্দ্র, সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মূল স্তম্ভ।বর্তমানে আছালত খাঁ’র অষ্টম বংশধরেরা বসবাস করছেন এই গ্রামেই। তারাই ইতিহাসের শেষ উত্তরাধিকার। তারা চান এই স্থাপনাটি শুধু টিকে থাকুক না, বরং সংরক্ষিত হোক, পুনর্গঠিত হোক গবেষণা ও পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে।আছালত খাঁ’র নবম বংশধর এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন প্রেস উইং এবং মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই এই সালিশখানার সঙ্গে একধরনের আবেগে জড়িত। প্রতিদিন একবার হলেও গিয়ে দেখতাম। মনে মনে স্বপ্ন ছিল, একদিন সুযোগ পেলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব। আজ গণমাধ্যমে এর ইতিহাস তুলে ধরছে সেজন্য স্হানীয় সাংবাদিকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চাই, সরকার যেন সালিশখানাকে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।”স্থানীয় তরুণ আল আকরাম মুন্না বলেন,”আমরা চাই সরকার এটা সংরক্ষণ করুক। এটাকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। বাইরে থেকে মানুষ এলে আমাদের ইতিহাস জানবে, আমরা গর্ব করতে পারব।”এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুয়েল সাংমা বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে স্থাপনার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে এর ঐতিহাসিক মূল্য যাচাই করব এবং পরবর্তী সময়ে তা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হবে।” SHARES সারা বাংলা বিষয়: