আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রংছাতিতে বালুর রমরমা ব্যবসা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৫
নাজমুলহুদা।।
প্রশাসনের নীরবতা, কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকা
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ওমরগাঁও, হাসানোগাঁও ও বিশাউতি মৌজায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মহাদেও নদ থেকে প্রকাশ্যে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন ও পরিবহন। দিনের আলো কিংবা রাতের আঁধারে—ইঞ্জিনচালিত নৌকা, হ্যান্ডটলি, লরি, ট্রাক এমনকি ঘোড়ার গাড়িতে বালু-পাথর বহন করে তা সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এসব অবৈধ কার্যক্রম স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও দৃশ্যমান কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এতটা নিরব কেন? কার স্বার্থে চলছে এই নির্বিঘ্ন অবৈধ বালু ব্যবসা?
২০২৩ সালে সংশোধিত বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের সুপারিশে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ এক অফিস আদেশে (স্মারক নম্বর: ০৫.৪৪.০০০০.০১৪.১১.০০১.২৩.১৭৩) মহাদেও নদীর ৬ নম্বর বালুমহাল—ওমরগাঁও, হাসানোগাঁও ও বিশাউতি পর্যন্ত—সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বাস্তবে নিষেধাজ্ঞা কাগজেই সীমাবদ্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত সমকালকে বলেন, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ সদা প্রস্তুত। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বক্তব্য বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। হাসানোগাঁওয়ের বাসিন্দা  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, এই ব্যবসা বছরের পর বছর ধরে চলছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। প্রশাসনের সামনেই চলে সবকিছু, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।সচেতন মহল মনে করছেন, প্রশাসনের এই নীরবতা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁরা বলছেন—যেখানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান, সেখানে অবৈধ বালু উত্তোলনের এমন দৃষ্টান্ত চরম দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্বও হাতছাড়া হচ্ছে। এই চক্রের পেছনে প্রভাবশালীদের ছায়া না থাকলে, এত বড় পরিসরে অবৈধ ব্যবসা এতদিন টিকতে পারত না।বিষয়টি নিয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের মোবাইল নম্বরে (০১৭১৫ – ১২৩১২৮) একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।হোয়াটসঅ্যাপে করা প্রশ্নগুলো ছিল: জেলা প্রশাসন কি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ? যদি করে, তবে এতদিনেও কার্যকরভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের কী পদক্ষেপ রয়েছে?
সবমিলিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়—আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের দুর্বল অবস্থান কার স্বার্থে ? কেন সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে, আর একটি প্রভাবশালী চক্র আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যাবে ?
সচেতন মহল দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রশাসনের কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছে।