পাহাড়ে শান্তির পথে বড় বাধা জেএসএস – চুক্তির আড়ালে সন্ত্রাসের রাজনীতি

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৫
মোঃ সোহেল।।
পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পরও পাহাড়ে শান্তির স্থায়িত্ব আজ বড় এক প্রশ্নের সম্মুখীন। আর এই অস্থিরতার পেছনে রয়েছে সন্তু লারমার পরিচালিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সরকার ও জেএসএসের মধ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিতে ৪৫ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমা দিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনে ফিরে আসার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা লঙ্ঘন করে আরও অস্ত্র মজুদের মাধ্যমে নিজেদের সশস্ত্র সক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। এই সশস্ত্র সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন শুধু পাহাড়ের নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শান্তিচুক্তি পর সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কারণে যে নিরাপত্তা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার সুযোগে পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সন্ত্রাসী ক্যাম্প এবং ধর্মীয় আশ্রমের আড়ালে অস্ত্রের ঘাঁটি। বিভিন্ন প্রত্যন্ত বাজারে ও দুর্গম পাড়ায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র টহল দিচ্ছে জেএসএস এর অস্ত্রধারী সন্ত্রসীরা—যা স্পষ্টতই চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।
সম্প্রতি গত ২৬ জুন রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে জেএসএস-এর সদস্যরা, যা শুধু ভয়ভীতি নয়, বরং তরুণ শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপথে ঠেলে দেওয়ার এক ধ্বংসাত্মক প্রয়াস বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। এসব কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয় যে, তারা পাহাড়ে একটি সন্ত্রাস-নির্ভর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে প্রশাসন বা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি যেন নিষ্ক্রিয় ও অপ্রয়োজনে পরিণত হয়।
শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। গত ৩০ জুন, ১লা ও ২রা জুলাই খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও দীঘিনালায় জেএসএস এর সশস্ত্র সংঘর্ষ—পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের এই আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে স্থানীয়দের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত এলাকার কিছু কিছু স্থানে সীমান্ত চৌকির সংখ্যা কম থাকায়  এইসব অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা ব্যাবহার করে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সহজেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানি করা হচ্ছে। সন্দেহ করা হচ্ছে এইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে চালানো বিভিন্ন হামলায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়াও উল্লেখ্য, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মিজোরামের লুংলাইতে বিপুল পরিমান অস্ত্রসহ তিন জেএসএস সদস্যকে গ্রেফতার হয়, যাদের সঙ্গে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের যোগাযোগ ছিল। এছাড়াও গত ৩ জুন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ১৩ জন জেএসএস সদস্যকে আটক করা হয়, যারা ‘চিকিৎসা’র নামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। এমনকি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মিজোরামে ৭০০ জন জেএসএস সদস্যের প্রশিক্ষণ করানো হয়, যা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নজরে আসে।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, জেএসএস এর এইসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষো ভাবে সহযোগীতা করে চলছে মনোগীত জুম্ম নামক এক ব্যক্তি যার আসল নাম করুনালংকার ভান্তে। নিজেকে ধর্মীয় বেশে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে পরিচয় দিলেও বাস্তবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি এবং তথাকথিত “জুম্মল্যান্ড”-এর স্বঘোষিত নেতা। তিনি মূলত একজন বিভাজনবাদী চরিত্র, যিনি ধর্মকে ব্যবহার করছেন রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ঢাল হিসেবে। নিজের বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নিজ জন্মস্থান খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ছেড়ে ভারতের দিল্লিতে বসবাস করছেন। সেখানে বসেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র বিরোধী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানা যায়, ২০১৭ সালে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বোডো গেরিলা বাহিনীর কাছ থেকে ৪১টি গ্রেনেড বাংলাদেশে এনে জেএসএস কাছে হস্তান্তর করেন এই মনোগীত জুম্ম। গত ৩ মে, জেএসএস নেতা সন্তু লারমা চিকিৎসার নামে দিল্লিতে গিয়ে মনোগীত জুম্মর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। এটি ভবিষ্যতের আরেক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি জেএসএস এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রুখে না দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, পুরো দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। সময় এসেছে জেএসএস এর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে পাহাড়ে প্রকৃত শান্তি ফিরিয়ে আনার