বোয়ালমারীতে আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর চার স্থানে হাট

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২৫
 আব্দুল্লাহ আল মামুন রনী।।
মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলাধীন অংশের উপর চারটি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে হাট বসে। এর ফলে সৃষ্ট যানজটের কারণে পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের নাকাল অবস্থা। হাটের দিনগুলোতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম।
জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার তিনটি স্থান অর্থাৎ সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী বাজার, সাতৈর বাজার এবং শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁয় সাপ্তাহিক হাট বসে সোমবার ও বৃহস্পতিবার। কাদিরদী থেকে সাতৈর বাজারের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। আবার সাতৈর বাজার থেকে শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ নামক স্থানের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এই আঞ্চলিক মহাসড়কটির তিনটি স্থানে স্বল্প দূরত্বে একই দিন (সোমবার ও বৃহস্পতিবার) সাপ্তাহিক হাট বসায় যানজট লেগে ফরিদপুর থেকে আলফাডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এর ফলে বাসযাত্রীরা ব্যর্থ হচ্ছেন কাক্সিক্ষত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে। এদিকে শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত একই ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে শুক্রবার ও মঙ্গলবার। সহস্রাইল বাজারের সাপ্তাহিক হাটও মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর বসায় এই দুইদিনও যানজটে থমকে যায় হাজারো মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর এলোমেলো করে পাটভর্তি ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারী, এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন যানে চলাচলকারী যাত্রীরা। স্থানীয়রা জানান, বড়গাঁ বাজারে হাট বসে সোমবার ও বৃহস্পতিবার। পাটের মৌসুমে বড়গাঁ বাজারের উপর দিয়ে যাতায়াতে সপ্তাহের ওই দুই দিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে। হাটের দিনে সহস্রাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে, কোথাও মহাসড়কটির উপরেই কাঁচাবাজারের অস্থায়ী দোকান বসেছে। দোকানিরা বিভিন্ন প্রকার সবজি, মসলা, দেশি ফলের পসরা মিলিয়ে বসেছেন। এতে সড়কে যেমন ক্রেতাদের ভীড়ে পথচারীদের চলাচল কষ্টকর; তেমনি যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে অসহনীয় যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা যাত্রীদের। এছাড়া একই উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী ও সাতৈর বাজারের সাপ্তাহিক হাটও মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর বসে। সড়কের উপর হাট বসায় ভীড়ের কারণে যানবাহন ক্রসিং করতে পারে না। যার ফলে তৈরি হয় যানজট।
সহস্রাইল বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মওলানা জাকারিয়া হোসেন বলেন, ‘‘সহস্রাইলে হাটের দুইদিন এ আঞ্চলিক মহাসড়কটির উভয় পাশের একাংশের উপর কাঁচাবাজার বসার কারণে পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকাল থেকেই সহস্রাইল বাজারে যানজট লেগে থাকে।’’ পার্শ্ববর্তী বনমালীপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বোয়ালমারী পৌর এলাকার বাসিন্দা শাপলা খানম বলেন, “প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার বড়গাঁয় সাপ্তাহিক হাট বসে। সকাল আটটা থেকেই ভিড় শুরু হয়। এজন্য অন্যান্য দিনের থেকে ওই দুই দিন বাড়ি থেকে আধাঘন্টা আগে বাসযোগে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। তারপরও জ্যামে পড়ে যাই।”
বড়গাঁর স্থায়ী বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, “সাপ্তাহিক হাটের দিনগুলোতে নিদারুণ কষ্টে থাকেন পথচারীরা। সড়ক থেকে কিছুটা দূরে নির্ধারিত কোন প্রশস্ত জায়গায় হাট বসাতে বণিক সমিতি ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।” বোয়ালমারী পৌরসভার বাসিন্দা শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী দীপঙ্কর পোদ্দার অপু বলেন, “আমার প্রায়শই ফরিদপুর ও আলফাডাঙ্গা যেতে হয়। মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপরের ৪টি স্থানে হাট বসায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।”
আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর হাটের কারণে সৃষ্ট যানজটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বড়গাঁ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মঞ্জু বলেন, “আমি দুই-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে বাজার বণিক সমিতির একটা মিটিং ডাকবো। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হয় জানাবো।”
এ ব্যাপারে সহস্রাইল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি চুন্নু বিশ্বাস বলেন, “কাঁচাবাজারের জন্য এর আগে নির্দিষ্ট একটা জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। সেখানে আমরা বণিক সমিতির পক্ষ থেকে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের বসিয়েছিলাম। মাস দুয়েক-তিনেক পরে দোকানদাররা মব-বিশৃঙ্খলা করে সড়কের উপর আবার তারা তাদের পণ্য নিয়ে বসেন।”
মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপরের চারটি স্থানে সাপ্তাহিক হাট বসায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে কি-না জানতে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সফিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। এরপর উল্লিখিত বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে উভয়কে ইমেইল করলেও কোন সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “এ বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলেছি। যাতে সড়কে যানজট না হয়। এ কাজে গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করার ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে রোডস এন্ড হাইওয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।” তিনি আরো বলেন, “হাইওয়ের উপর বেশ কয়েকটা বাজার থাকলেও সহস্রাইল বাজারে বেশি সমস্যা। সহস্রাইল বাজার সরিয়ে যে অন্য জায়গায় দেব আশেপাশে সেরকম কোন সরকারি জায়গাও নেই।”