আধিপত্যর দিক দিয়ে প্রশাসনের চেয়েও শক্তিশালী দুই ইউপি মেম্বার।

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
 মোঃ কাওছার মিয়া।। জগন্নাথপুরের কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। উন্নয়ন কাজের নামে নদীতে ড্রেজার (খনন যন্ত্র) বসিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে বালু উত্তোলন। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে বালু তুলে তা বিক্রয় করে অর্থ লুট করছে। অন্যদিকে দিন-রাত বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ, ফসলি জমিসহ আশেপাশের ঘরবাড়ি। এছাড়াও দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রানীগঞ্জ সেতুও হুমকির মুখে রয়েছে দাবি স্থানীয়দের।  এদিকে, স্থানীয় ইউপি সদস্য তেরা মিয়া (তেরাব) জিম্মায় রাখা জব্দকৃত একটি বালুর নৌকা রাতের আঁধারে উধাও হয়ে গেছে বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। জানা গেছে, গত সোমবার বিকালে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রয়কালে উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট’স ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন এর দুই প্রতিনিধি জাহিদ হাসান ও আব্দুর রহিম তালুকদারের সহযোগিতায় একটি নৌকা জব্দ করেন রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সেলিম মিয়া।উক্ত অবৈধ বালু উত্তোলনে স্থানীয়  দুই ইউপি সদস্যদের সংশ্লিষ্টটা পাওয়া যায় এবং তাদের হাতে-নাতে ধরা হয়।পরে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য তেরাব মিয়ার জিম্মায় জব্দকৃত নৌকাটি রানীগঞ্জ বাজার ঘাটে রাখা হয়। কিন্তু পরদিন সকালে নৌকাটি উধাও হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের যোগসাজশে নৌকাটি ছেড়ে দিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সেলিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, নৌকাটি ঘাটে না পেয়ে ওই ইউপি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু উনার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। বিষয়টি এসিল্যান্ড স্যারকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা মুঠোফোনে বলেন, সরজমিনে যাচ্ছি, তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জের জেলা রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা এলাকায় নির্মাণাধীন “কৃষি ইনস্টিটিউট (এটিআই)” এর উন্নয়নের কাজের জন্য কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনে সরকারি অনুমতি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ। গেল বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারির ওই অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র কৃষি ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন কাজের জন্য উপজেলার পাইলগাঁও ২১৮ নম্বর মৌজার ২৯৮, ৭০৯২ ও ২১৪ নম্বর দাগ এবং দিঘলবাক ২৬২ নম্বর মৌজার ২৮, ৩২৩, ৩৬২, ৩২২৬ ও ৩২২৭ নম্বর দাগের কুশিয়ারা নদীর তলদেশ থেকে মোট ৫৫ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতির পর থেকে ওই দুই মৌজার নির্ধারিত স্থান থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই উন্নয়ন কাজের নাম ভাঙিয়ে কুশিয়ারা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন শুরু হয়। একাধিকবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় হতাশ স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়ন কাজের জন্য রানীগঞ্জ সেতু এলাকা থেকে অর্থাৎ পাইলগাঁও মৌজার অংশে ড্রেজার বসিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে কৃষি ইনস্টিটিউটে বালু নেওয়া হচ্ছে। ফলে দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রানীগঞ্জ সেতুটি হুমকির মুখে রয়েছে। অন্যদিকে দিঘলবাক মৌজার বালু কৃষি ইনস্টিটিউটে না এনে অন্যত্রে অবৈধভাবে বিক্রয় করা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে অবাধে বালু উত্তোলনে আশারকান্দি, পাইলগাঁও এবং রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। অদৃশ্যে শক্তির কারণে প্রশাসনের নিরব ভূমিকা। যা অবৈধ বালু উত্তোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী এই বালু খেকো মানুষদের কাছ থেকে রেহাই পাবে কি? গত সোমবার মেম্বারের জিম্মায় পলাতক নৌকা উদ্ধার হয়নি এবং জড়িত মেম্বারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।