দুই বয়স্ক ভ্যানচালককে কানধরে উঠবস করানো ছবি ভাইরাল

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকেই জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন।এমন দুইবৃদ্ধ ভ্যানচালককে কানধরে উঠবস করিয়েছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) সাইয়েমা হাসান।

শুক্রবার রাতে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।

এ প্রসঙ্গে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘ছবিটি আমি দেখেছি। এটি তিনি করতে পারেন না। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের কাজ নয়। তাকে শোকজ করব।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে যশোরের মণিরামপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তবে তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এ ছাড়া পরবর্তীতে অপর এক ভ্যান চলককে অনুরূপভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। সমালোচনার ঝড় বইছে। যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) সভাপতি সাজেদ রহমান ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, রাষ্ট্রের মালিকের সঙ্গে, রাষ্ট্রের কর্মচারীর আচরণ… কান ধরে উঠবস করানো বৃদ্ধটি ভ্যানচালক। নাম বললাম না। পেটের দায়ে সংসারের চাল ডাল কিনতে এসেছিলেন যশোরের মণিরামপুরের চিনাটোলা বাজারে। উপজেলার এসিল্যান্ড সাইমা হাসান জনসম্মুখে তাকে কান ধরে উঠবস করালেন। আবার মজার ঘটনা মনে করে তিনি ছবি তুললেন নিজের মোবাইলে। এসিল্যান্ড দেশের সামান্য একজন কর্মচারি। এই ছবি দেখে আমি স্থির থাকতে পারছি না। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।

সাজেদ রহমানের পোস্টটি শেয়ার করেছেন যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু। তিনি লিখেছেন ‘সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ ও আমলা। এইসব বন্ধ করুন।’

যশোর জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শ্যামল কুমার শর্মা তার ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, এই জন্যই আমাদের রক্ষক কিছু পুলিশ এবং কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিচে মানুষ সমালোচনা করে। দয়া করে অতি উৎসাহিত হবে না।

এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার রাত ১১টার পর কয়েকবার ফোন করলেও রিসিভি করেননি মণিরামপুরের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) সাইয়েমা হাসান। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনে ভুল হতে পারে। এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশও করেন।