কালীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চাঁদা দিয়ে সরকারি বই সংগ্রহ। দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২৫ মোঃ সোহাগ আলী।। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকার প্রদত্ত প্রাথমিকের বিনামূল্যের বই সংগ্রহে শিক্ষা অফিস কর্তৃক চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ১৫০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রায় ৩০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে এই চাঁদার টাকা নেওয়া হয়েছে।প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অফিস কর্তৃক ক্লাস্টার ভিত্তিক নির্ধারিত একজন শিক্ষকের মাধ্যমে ১০০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়েছে। অপরদিকে কিন্ডারগার্টেন ইস্কুলের সমিতির মাধ্যমে নেওয়া হয় এই চাঁদার টাকা। সরকারি বিধিতে বিনামূল্যের বই সংগ্রহে জন্য টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও অনৈতিক উপায়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এ টাকা জোরপূর্বক আদায় করেছে বলে অভিযোগ করছেন খোদ শিক্ষাকরাই ।প্রতিটি স্কুলে বই সংগ্রহের জন্য পরিবহন খরচ সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলেও উপজেলা অফিসে বই সংগ্রহের জন্য বিনা রশিদে চাঁদা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর উপজেলার আবাসিক এলাকার ডরমেটরি থেকে প্রথম শ্রেণির বাংলা,গণিত, ইংরেজি বই, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি বই, তৃতীয় শ্রেণীর ৬ টি বিষয়ের তথা সব বই,চতুর্থ শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই,পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি বই প্রদান করা হয়। কিন্তু উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রাক প্রাথমিক, চতুর্থ শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়,প্রাথমিক বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের বই প্রদান করা হয়নি।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই পেলেও কিন্টারগার্টেন স্কুলগুলো চাহিদার সত্তর শতাংশ বই পেয়েছে বলে জানা যায়। সরেজমিনে উপজেলার ডরমেটরি এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, বড় শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম কাগজে কলমে স্কুলের নাম লিখে টাকা নিয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিকট বই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ক্লাসটারে ন্যায় আড়পাড়া শিবনগর ক্লাস্টারের ২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিনামূল্যের বই প্রদানের জন্য টাকা তুলেছেন উপজেলার ভাতঘরা জটারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।নিয়মবহির্ভূতভাবে বিনামূল্যের বই প্রদানে প্রতি স্কুল থেকে চাঁদা তোলার ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান,স্কুল প্রতি ১০০ করে টাকা তুলে আমার অফিসে দিয়েছিল। আগে আমরা ২০-৩০ টাকা যারা কাজ করে তাদেরকে দিতাম। আমি ঐ টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসারের নিকট জমা দিয়ে দিয়েছি। বই নেওয়ার জন্য টাকা দেওয়ার কোনো নিয়ম আছে কিনা আমি জানি না। তবে এবার বই বিতরনের কাজ শিক্ষকরাই করেছেন। আপনি স্যারদের সাথে কথা বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, এবার অফিস থেকে নিয়ম করেছে স্কুল প্রতি ১০০ করে টাকা দিতে হবে বই নেওয়ার জন্য। পূর্বে আমরা বই নেওয়া কাজে সহযোগীতাকারীদের ২০ – ৩০ টাকা বা যে যার ইচ্ছা মত টাকা দিত। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। স্যারেরাই বই দিচ্ছেন, তারাই টাকা তুলেছেন। কিন্ডারগার্টেনের প্রায় ৩০ টি স্কুলকেও একই হারে নগদ টাকা দিয়ে বই নিতে হয়েছে। এবছর সব শ্রেণির বই একসাথে পেলাম না। উপজেলায় বাকি বইগুলো আনতে গেলেও আবার টাকা দেওয়া লাগবে কিনা আল্লাহই ভালো জানে। তবে এভাবে বাধ্যতামূলক টাকা নেওয়ার ফলে অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলেও তারা জনান। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা(টিইও) শারমিন নাসিমা বানুর নিকট বিনামূল্যের বই টাকা নিয়ে প্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা তোলার ব্যাপারে আমি জানি না। বই বিতরণ কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত থাকে তাদের আপ্যায়নের জন্য কিছু টাকা হয়ত তারা দিতে পারেন। এটা সব জাইগাতেই হয়।অবশ্য এটা কালচারে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষক সমিতির নেতারা এটা দেখভাল করছে জানি।আমি ঢাকাতে আছি, ফিরে এসে ব্যাপারটি দেখব। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম এ ব্যাপারে জানান, ব্যাপারটা আপনার থেকে প্রথম শুনলাম। আমি দেখব। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা স্কুল প্রতি টাকা নিয়ে বিনামূল্যের বই প্রদানের অভিযোগের ব্যাপারে বলেন,বই নেওয়ার জন্য কোনো টাকা নেওয়ার বিধান নেই। টাকা নিতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও কেনো টাকা নেওয়ার হলো সেটা আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। SHARES সারা বাংলা বিষয়: