খানসামা উপজেলার ৮৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪

মো: মজনু আলম,খানসামা। ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৮৭ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো নেই কোনো শহীদ মিনার। ফলে ওই সব অধিকাংশ বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবস পালন করা হয় শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। আবার কোনও প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের স্বদিচ্ছার অভাব ও উদাসীনতাকে দায়ী করছে সচেতন মহল।

অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে তা সারা বছর পড়ে থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। শুধু জাতীয় দিবসের দিনে পরিষ্কার করে ব্যবহার করা হয়।

খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল এন্ড কলেজ, মাদ্রাসা, কলেজ ও কারিগরি কলেজ মিলে মোট ৯৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। সেই সাথে উপজেলার কোন মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজে শহীদ মিনার না থাকার মিলেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলার ১৪৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

ভাষা আন্দোলন ও দেশ স্বাধীন হওয়ার এতদিন পরও শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অনেকেই জানান, উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেই শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না। শুধুমাত্র উপজেলা সদর ও পাকেরহাট এর আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বও অনুধাবন করতে পারছে না।

সরেজমিনে উপজেলার পাকেরহাট, ছাতিয়ানগড়, আংগারপাড়া, খানসামা ও খামারপাড়া এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইট-সিমেন্টের মানসম্মত শহীদ মিনার রয়েছে আর অন্যদিকে কিছু স্কুলে রয়েছে লোহার পাইপ দিয়ে বানানো শহীদ মিনার। সেগুলো জং ধরে বর্ণহীন। ২১ ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। অন্যদিকে উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহীদ মিনার বিহীন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হলে তাঁরা জানায়, শহীদ মিনার নির্মাণ করতে মোটা অর্থের প্রয়োজন। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।

অথচ ২০১৬ সালের (১১ ফেব্রুয়ারি) দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের যেসব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেগুলোতে অতি দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক বলেন, এই উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো প্রতি বছর সংস্কারের জন্য প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মনজুরুল হক বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাউশি’র নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহীদ মিনার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির সভাপতিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তাজ উদ্দিন বলেন, যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নাই সেগুলোকে ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীরা যেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে।