অমর চিন্তক মহাজ্ঞানী সক্রেটিশ দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২৫ Ripon Sarkar।। প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত দার্শনিক পন্ডিত আত্মদর্শী ব্যক্তিত্ব সক্রেটিশ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে আটিকা প্রদেশের একটি ছোট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন| তাঁর পিতা সফ্রোনিসকাস ওল কিনারিটা সামান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন| পিতার মৃত্যুর পর তিনি পৈত্রিক ব্যবসায় মনোনিবেশ না করে আর্কিলস নামক একজন দার্শনিকের নিকট শিক্ষা লাভ করেন| সক্রেটিশের সময়ে এসকাইলাস, শফোকশ, পেরিকিলাস প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ মনীষীগণ জন্ম গ্রহণ করেন| দেশ প্রেমিক এই মহান পন্ডিত স্বদেশের কল্যানে ৩ বার যোদ্ধারূপে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন| একবার তিনি সিনেটস্থ পাঁচশত সভ্যের অন্যতম সিনেটর হয়েছিলেন| তাঁর বর্ণিল জীবনালেখ্য থেকে জানা যায় সেই প্রাচীন কালে গ্রীসে যত প্রকার জ্ঞানের চর্চা হত সক্রেটিশ সেই খ্যাতনামা পন্ডিতদের নিকট থেকে সে সমস্ত বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করেছিলেন| তাঁর জীবন ও বাণী অধ্যয়ন করলে এক কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় তিনি সর্বকালের ও সর্বদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ছিলেন| শুধু তাই নয় এই সময় ডেলফির এপোলো দেবের মন্দিরে দৈববানী হল যে, * সক্রেটিশ গ্রিসের মধ্যে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী| “এই সংবাদ জানার পর তিনি তা বিশ্বাস না করে এই দৈববানী পরীক্ষা করার জন্য এথেন্সের সর্বপ্রধান রাজনীতিজ্ঞ, দার্শনিক, পন্ডিত, ডাক্তার আইনজ্ঞ সবার সাথে তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে আলাপ করতে লাগলেন| সক্রেটিশের ধারনা ছিল ঐ সব ব্যক্তিবর্গ তার চেয়ে অনেক জ্ঞানী কিন্তু আলাপের পর বুঝলেন যে, তাঁরা নিজের মূর্খতা বুঝতে অক্ষম, কিন্তু সক্রেটিশ নিজের অজ্ঞাতা নিজে বুঝতে পারেন এবং তিনি স্থির করলেন যে, “এই হিসাবে ডেলফির দৈববাণী সত্য” ডেলফি মন্দিরে ‘Know thyself’ বা নিজেকে জান এই দৈববানীই তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল| আত্মজ্ঞান লাভ করার জন্য তিনি জীবনব্যাপী সাধনা করে গেছেন| Apology তে তিনি বলেন “আত্ম জ্ঞান লাভই জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য|” আত্মজ্ঞানই সত্যজ্ঞঙ্কন| অন্য সর্ব প্রকার জ্ঞানই মিথ্যা মূল্যহীন| ঈশ্বরের পক্ষ থেকে আমি সকলকে তাহা জানিয়ে দেই যে, ঈশ্বর প্রকৃত জ্ঞানী তাঁকে জানাই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান| মানবের জ্ঞান কিছুই নয়| সমস্ত জীবন আমি এই কার্যে এত ব্যাপৃত ও ব্যস্ত থাকি বলে সামাজিক ও সাংসারিক জীবনে আদৌ যোগ দিতে পারিনা| আমি ঈশ্বরের সেবার জন্য ভীষণ দারিদ্র্য বরণ করে নিয়েছি | সক্রেটিশ গ্রীসে এক নব চিন্তাধারার প্রবর্তন করেন| তাই তাঁকে Thinking shop বা চলমান বিপনি বলা হত, যেখান থেকে বিনা মূল্যে পাথেয় বিক্রয় হয়ে থাকে| তাঁকে তাঁর জীবদ্দশায় এথেন্সবাসী Moving institution বলত| প্রকৃত পক্ষে তিনি একাই একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাস্তায় বাজারে দোকানে ও অন্যান্য স্থানে গিয়ে মানুষের নৈতিক আদর্শ সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করতেন| এথেন্সের অনেক বড়লোকের সন্তানেরা সক্রেটিশের চেতনায় উদ্বৃদ্ধ হয়ে তাদের পৈত্রিক ব্যবসায় অমনোযোগী হয়ে সক্রেটিশের সান্নিধ্য চলে আসত| সক্রেটিশ তাদেরকে সৎনি অসৎ কি ন্যায় অন্যায় কি? সুন্দর কি অসুন্দর কি এসব বিষয়ে জ্ঞান দান করতেন| সক্রেটিশ ভারত বর্ষের গৌতম বুদ্ধ এবং চৈনিক দার্শনিক কনফুসিরাসের সমসাময়িক ছিলেন| গৌতমবুদ্ধের হৃদয় সিঙ্গু মস্থানকরা বানী ছিল “আত্মদীপভব” তোমার মধ্যে জ্ঞানের দীপ প্রজ্জ্বলন কর| আপরদিকে কনফুসিয়াসের মতে-যিনি নিজেকে অজ্ঞানী বলিয়া মনে করেন তিনিই মহাজ্ঞানী | পোপ বলতেন “মানুষই মানবজাতির অধ্যায়নের বিষয়|” জার্মান দার্শনিক কান্ট ও বলতেন “উর্দ্ধে নীলাকাশ আর নিম্নে মানব মনকে জানা অতিশয় শক্তি|” সক্রেটিশের জীবন এই মানবাত্মাকে জানার জন্যই উৎসর্গীকৃত ছিল| জনগন তাই তাকে ‘mid wife of men’s দেবাদেশ দ্বারা চালিত হতেন| mind বলত| সক্রেটিশ সারা জীবন চিন্তা-ও-কর্মের নিয়ামক ছিল। তাঁর নিকট জীব’ মানে ‘আত্মানং বিদ্ধি| তাঁর প্রধান শিষ্য মহামতি প্লেটোর ভাষায় বলা যায়- “তিনি (সক্রেটিশ) প্রায় প্রত্যহই বহুক্ষণ যাবৎ এক প্রকার উদাসীন অন্য অন্য মনস্ক ও অর্কমুখীভাবে তন্ময় থাকিতেন| তখন তাহার বিশেষ বাহ্যজ্ঞান থাকিত না| “প্লেটো এই অবস্থাকে ‘সমাধি’ নামে অভিহিত করেন| যে সব ধনাট্য ব্যক্তি সক্রেটিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করেন তারা হলের এনিটস্ লিকো ও মিলিটাস্ তাদের অভিযোগ তিনি কোন দিন দেবতার পূজা করেন নাই, দেবতাদের নিকট উপহার দেন নাই| বিচার চলাকালে সক্রেটিশ নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবী করেন| যে জুরি তাঁর দন্ডাদেশ প্রদান করেন তাদের সংখ্যা ৫৫৭জন| এদের মধ্যে ২৮১ জন তাঁর বিরুদ্ধে এবং ২৭৬ জন তাঁর পক্ষে ভোট দেন| তথনকার সময়ে বিষ প্রয়োগে প্রাণ দন্ডের ব্যবস্থা ছিল| হেমলক নামক বিষ তাঁকে পান করতে দেয়া হয়| ৩৯৬ খ্রিঃ পূর্বে তিনি প্রাণ বিসর্জন করেন| এথেন্সের নিয়মানুসারে মৃত্যুর পূর্বে তাকে একমাস কারাগারে থাকতে হয়| এসময় তাঁর আত্মীয় স্বজন শিষ্য এবং পরিবার বর্গ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন| একদিন এক শিষ্য বললেন, “সক্রেটিশ সর্বাপেক্ষা আমার অধিক দুঃখের কারণ এই যে, তমি বিনাদোষে মৃত্যুবরণ করিতেছ|” সত্রেটিশ উত্তরে বলেন এ্যাপলোডোরাশ তুমি কি ইচ্ছা কর, আমি অপরধী হয়েই মৃত্যুবরণ করব? সত্যিকার অর্থে সক্রেটিশ সেই মহামানব ছিলেন যিনি বিশ্বাস করতেন মাপুরুষগণ যুগে যুগে জগতের শিক্ষার জন্য মানুষকে অমৃতের সন্ধান দেবার জন্য নির্দোষী হয়েই মৃত্যু আলিঙ্গণ করেন| আসলে এ মৃত্যু নয় মুক্তির মন্দির সোপান তলে প্রাণ উৎসর্গ করা| আর একদিন এক শিষ্য কারাধ্যক্ষকে উৎকোচ দিয়ে সক্রেটিসকে পালাবার অভিপ্রায় জানালে সক্রটিশ শিষ্যকে বললেন, “আমি কোথায় যাইব? যদি তুমি এমন স্থলে লাইয়া যাইতে পার যেখানে মৃত্যু নাই তাহা হইলে আমি তোমার অভিপ্রায়নুসারে কাজ করিতে পারি| সক্রেটিশ মনে করতোযে, ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যবর্তী এক প্রকার আত্মা আছেন| এরা মানুষের কার্য নির্বাহ করে থাকেন, এই সমুদয় আত্মা পবন বজ্র ইত্যাদি নৈসর্গিক পদার্থ| এরা ঈশ্বরের ভৃত্য এবং তাঁরই আদেশে এরা মানুষের কাজ নির্বাহ করেন| এক শিষ্য মৃত্যুর পর তাঁর সৎকারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, সক্রেটিশ বলেন “তোমরা মৃতদেহের সৎকার যেরূপ ইচ্ছা করিতে পার কিন্তু কদাপি কল্পনা করিও না যে, সক্রেটিশ এই দেহ| এই দিব্য মানব, আত্মার অমরত্বে পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন| সক্রেটিশ তাঁর জীবদ্দশায় কোনদিন ক্রোধ প্রকাশ করেন নি| মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিচলিত ছিন্ত ছিলেন| হেমলক বিষ আনীত হলে সক্রেটিশ প্লানাচ্ছি কার্য সমাপন করে চির আনন্দময় অমৃত লোকে যাবার জানা তৈরি হন| কোন প্রকার চাঞ্চল্য নেই, বিষ পাত্র তাঁর হাতে দেয়া হলে তাকে বলা হল যে, তিনি বিষপান করার পর যতক্ষণ তাঁর পা দুটি ভারিবোধ না হয় ততক্ষন তিনি ধীরে ধীরে পায়চারি করবেন এবং তারপর তিনি স্থিরভাবে শুয়ে থাকবেন| তাঁর চোখে অশ্রু এলনা| স্থিত প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসীর ন্যায় মহা নিদ্রার ক্রোড়ে শয়ন করার জন্য প্রস্তুত হলেন| বিষপানের পূর্বে তাঁর স্ত্রী আর্ত চিৎকারে পরিবেশ ভারি করে তুললেন| সক্রেটিশ তাকে এক শিষ্যের সাথে গৃহে পাঠিয়ে দিলেন| মৃত্যু শয্যায় শায়িত মাহামনব, শিষ্যরা ক্রন্দরত| তিনি সবার উদ্দেশ্য বললেন, দৃঢ় হও চোখের জল সামলাও| “নীরবতা… arrived, we go our ways, I to die, you to live whichwe is bellier only goed knows. সবই মঙ্গলময়ের ইচ্ছা| Every thing is done by his will. সবশেষে এই মহাজ্ঞানীর জীবনাদর্শ সম্পর্কে একটি তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে নিবন্ধ শেষ করছি| সক্রেটিশের দুই পত্নী ছিল এর মধ্যে জ্যান্থিপির নাম সকলের জানা| তিনি অত্যান্ত উগ্র প্রকৃতির মহিলা ছিলেন| একবার তিনি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে মহাজ্ঞানী পতির মাথায় এক গামলা ময়লা জল ঢালিয়া দেন| রাগদ্বেষহীন সক্রেটিশের মন্তব্য এত মেঘ গর্জনের পর এইরূপ বৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক| এই হচ্ছেন বিশ্বনন্দিত মহামানব মহাজ্ঞানী সক্রেটিশ| সৃষ্টির চলমানতায় সক্রেটিশ মানব চেতনায় চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন| সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও আত্ম সর্বজ্ঞ চিৎস্বরূপ চেতনার এই ঋত্বিক বিশ্ববাসী শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক গুরুর আসনে| SHARES সারা বাংলা বিষয়: