মেহেরপুরে ফুফুকে দাদি সাজিয়ে জমি রেজিষ্ট্রির অভিযোগ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২৫
মোঃ মাহাবুল।।
মেহেরপুরের গাংনীতে ফুফু সকিনা খাতুনকে দাদি ছফুরা খাতুন সাজিয়ে দাদির ১ একর ৮৪ শতক জমি রেজিষ্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী ফুফু সকিনা খাতুন একই ইউনিয়নের ধানখোলা গ্রামের আলিম উদ্দীনের স্ত্রী, আরিফুল ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে এবং দাদি ভাটপাড়া গ্রামের মৃত আমান আলীর স্ত্রী।
সকিনা খাতুন জানান, আমাকে ২ বিঘা জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমার ভাই আব্দুর রহিমের ছেলে আরিফুল আমাকে দিয়ে টিপসহি নিয়ে নেয়। আমি সে সময় ওদের বাড়িতেই অবস্থান করতাম। কিন্তু কে জানতো আমাকে আমারই মা সাজিয়ে টিপসহি নিয়ে মা সফুরা খাতুনের ১ একর ৮৪ শতক জমি রেজিষ্ট্রি করে নিয়ে সকল শরিকদের সাথে প্রতারণা করবে। জমি রেজিষ্ট্রির টিপসহি ও বর্তমানে জমি দাবির জন্য কেউ বাধ্য করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনাকে কেউ বাধ্য করেনি বলে জানান।
সকিনা খাতুন জানান, তখন কিছু না বললেও মা সফুরা মারা যাবার পর জমি-জমা বুঝিয়ে নিতে চাইলে আরিফুল কখনো দেবো, কখনো বা জমি কিসের পাবে? তুমি জমি পাবেনা এমন কথা বলতে থাকে এবং বিভিন্ন ভাবে হুমকী-ধামকী দিতে থাকে। সে সময় মা বেঁচে আছে কিভাবে জমি দেবে জানতে চাইলে আরিফুল বলে দাদি মারা যাবার পর জানাবে যে, জীবিত থাকাকালীন সময়ে রেজিষ্ট্রি দিয়েছে। এ বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে সফুরা খাতুন মারা যাবার পর সকিনাসহ বাকী শরিকরাও তাদের ভাগ বুঝে নিতে চাইলে ছফুরা খাতুন তিনার জমি ২০১৮ সালের দিকে নাকি নাতি ছেলে আরিফুলকে রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে গেছেন বলে জানান আরিফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
উপায় না পেয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভাটপাড়া ভূমি অফিসের ৩৬ নং মৌজার ১৭৫ নং খতিয়ানভুক্ত ১৬৫২ দাগে ৬৬ শতক, ২২২০ দাগে ৮৫ শতক ও ১৭৮৮ দাগে ৩৩ শতক মোট ১ একর ৮৪ শতক জমি ফেরত পেতে মেহেরপুর সার্কেল অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে জমি-জমার দলিলপত্র দেখে অসহায় ফুফুকে ২ বিঘা জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয় আরিফুলকে। যা দিতে সম্মতি হলেও পরবর্তীতে আর দেয়নি বলে জানান ভাটপাড়া গ্রামের নূর ইসলাম। তবে পারিবারিকভাবে কোন সমাধান হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। অবশ্য গত ৬মাস পূর্বেও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে বসা হয় বিষয়টির সমাধান নিয়ে। তবে সেখানে কি কথা হয়েছে তাও তিনি অবগত নন বিশেষ মূহুর্তে নামাজে চলে যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, কসবা গ্রামের লাল্টু মাষ্টার ও চিৎলার কাউসারসহ অর্ধশতাধিক লোকজন বলেও জানান তিনি।
কাউসার আলীর সাথে ফোন কলে কথা হলে তিনিও ঐ একই কথা বলেন।
সকিনার ভাই ইদ্রিস আলী জানান, স্থানীয় স্কুলে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসে সেখানে জমি রেজিষ্ট্রি আরিফুলের নামে হয়েছে সেই জমির দলিলপত্র বাদী পক্ষকে শো করতে বলা হয়। একই সাথে জমি রেজিষ্ট্রি হোক আর না হোক বংশের লোকজনের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রাখতে  যেহেতু শরিকদের হক রয়েছে সে হিসেবে কিছু জমি ফেরত দেওয়ার জন্য চিন্তা ভাবনার জন্য সময় দেওয়া হয়। কিন্তু আজ এপর্যন্ত আরিফুলের চিন্তা ভাবনা চলমান।
ভাটপাড়া গ্রামের ফজলুল হক জানান, ইতিপূর্বে মেহেরপুরে একটা ফয়সালা করা হলেও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি। গ্রামেও তেমন সমাধান হয়নি।
অপর এক শরিক সফুরা খাতুনের নাতনী মমতাজ খাতুন জানান, আমার ফুফুকে ২ বিঘা জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে দাদি সাজিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয় আরিফুল। এখন ফুফুকে সেই জমি দিচ্ছে না বলেই ফুফু মুখ খুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা করতে গ্রাম্য সালিশে বসা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে আমাকে সালিশ থেকে বের করে দেয় তৎকালীন সরকারের স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজগার আলী।
বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে আজগার আলীকে ফোন করা হলে তিনার নং বন্ধ পাওয়া যায়।
আরিফুলও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জমি দেবেনা মর্মে বিভিন্ন ভাবে হুমকী-ধামকী অব্যাহত রাখে। বর্তমানে ক্ষমতার দাপট না থাকায় আরিফুলের বাবার রেজিস্ট্রি করে নেওয়া ২ বিঘা+ এবং আরিফুল যে তার ফুফুকে দাদি সাজিয়ে ১ একর ৮৪ শতক জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয় সকল জমির ন্যায্য ভাগ চান। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান তিনি।
সফুরা খাতুনের ছেলে মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মামুন জানান, তিনার দাদি সফুরার নাতি ছেলে ১০/১২ জন। সকলকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আরিফুলের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেবে এটা সবার কাছেই অবিশ্বাস্য। ২০১৭ সালে সফুরা খাতুন (দাদি) বিছানাগত ছিলো, তবে কিভাবে ২০১৮ সালে জমি রেজিষ্ট্রি দেয়। তাছাড়া পাড়ার মহিলাদেরও জানিয়ে গিয়েছিলেন মারা যাবার পর সকলে জমি ভাগ করে যেন নেয়। এছাড়াও তিনি আরিফুলের নামে বিগত সরকারের আমলে পুলিশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বংশের বহু লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এবং কাউকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়নি বলেও অভিযোগ তোলেন। যার কারণে এখন নাকি আরিফুল আত্মগোপনে রয়েছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে আরিফুল ইসলামের সাথে ফোন কলে কথা হলে ফুফুকে দাদি সাজিয়ে জমি রেজিষ্ট্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি জানান, দাদি মারা যাবার পূর্বেই তিনাকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে যায়। যার দলিলপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি জানান, অন্যান্য শরিকরা অভিযোগ করেন আমার বিরুদ্ধে জমি রেজিষ্ট্রি করে নেওয়ার। পরবর্তীতে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কথানুযায়ী অসচ্ছল ফুফু সকিনা খাতুনকে কিছু জমি দিতে রাজি হলেও পরবর্তীতে নানা মামলায় হয়রানির জন্য তা আর দেওয়া সম্ভব নয়। সর্বশেষ তিনি জানান, আমি যদি ফুফুকে দাদি সাজিয়ে টিপসহি নিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করে নিয়ে থাকি তবে ফুফু সকিনাতো বেঁচেই রয়েছেন। ফুফুর ফিঙ্গারের টিপসহি পর্যবেক্ষণ করা হোক। পূর্বের টিপসহির সাথে এখন টিপসহি মিলে গেলে আমি জমি ফেরত দিতে রাজি রয়েছি।
এবিষয়ে এলাকাবাসীর আরো কয়েকজনের সাথে কথা হলে তিনারা জানান, যেহেতু নিজেদের পারিবারিক জমিজমার বিষয়। সেহেতু মামলা ও হয়রানি না করে এর একটা সুষ্ঠু সমাধান করাটাই ভালো হবে। যেহেতু সকিনা অসচ্ছল ও বয়স্ক সে হিসেবে কিছু জমি দিয়ে তার দুর্দশা দূর করা উচিৎ।