নীরব প্রশাসন? শিবগঞ্জে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
মিজানুর রহমান।।বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের বিভিন্ন যায়গায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমি দস্যুদের প্রলোভনে তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক।ট্রলি, ড্রাম ট্রাকে বহন করা মাটি সড়কের ওপরে পড়ে থাকছে।মাটি পড়ে বিটুমিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সড়কে পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।প্রকাশ্যে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম, চককানু গ্রামের বাদশা মিয়া এবং কুড়াহার গ্রামের দুদু মন্ডল এর ছেলে মাটি বাবা নামে পরিচিত সাবেক যুবদল নেতা  মিলন। নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ।প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়াই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,আটমুল ইউনিয়নের কুড়াহার, আয়নাপাড়া,চন্দনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে দিনে ও রাতে মাটিখেকোরা ফসলি জমির মাটি এক্সকেভেটর(ভেকু) দিয়ে কৃষি জমি থেকে ১৫-১৬ ফুট গভীর করে মাটি খাড়াভাবে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আটমুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা হত্যা-মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি রেজাউলের নেতৃত্বে এই মাটিকাটা চলছে বলে জানায় ইউনিয়নবাসী।একজন আওয়ামীলীগ নেতা  বর্তমান পেক্ষাপটে প্রকাশ্যে কোন ক্ষমতাবলে মাটি বাণিজ্য করছে আর তার পেছনে কোন অদৃশ্য শক্তি  রয়েছে এই নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা।অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এসব মাটিখেকোদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মাটি বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিচ্ছে।এদিকে মাটি ব্যবসায়ীদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় থেকেই রেজাউলের নেতৃত্বে মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট চক্রটির ভয়ে জমির মালিকরা কিছু বলতে সাহস পেত না। বর্তমানে রেজাউল স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় মাটি বাণিজ্য করছে।কুড়াহার আয়নাপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম ও অটো ভ্যান চালক বাদশা মিয়া বলেন,অনুমোদন বিহীন অবৈধ ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকে করে মাটি বহনের ফলে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেয় না।স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,আপনাদের এগুলো জিজ্ঞাসা করে কি হবে? পত্রিকায় দিয়ে লাভ কি?প্রশাসন চাইলে এমনিই বন্ধ করতে পারে। কিন্তু তারা এগুলো বন্ধ করবে না।মাটি কাটার সাথে জড়িত রেজাউল বলেন,আমি মৌখিক ভাবে ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পুকুর সংষ্কার করার জন্য অনুমতি নিয়েছি।তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তাহলে আপনি মাটি বিক্রি করছেন কেন,এর কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি।কুড়াহার গ্রামের মাটিবাবা মিলন বলেন,মাটিকাটা বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোন অনুমতি নেইনি।তবে স্থানীয় ভাবে সবাইকে ম্যানেজ করেছি।আটমুল ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন,মাটি কাটার ফলে এলাকার রাস্তা ঘাটের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাবো।উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হান্নান বলেন,জমির উর্বরতা শক্তি ওপর থেকে ১৫-২০ ইঞ্চির মধ্যে থাকে। এই অংশে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো  ফসলের গুণগত মান বাড়ায়, ডাল ও ফসলের ফলন বাড়ায়, শস্যের দানা পুষ্ট করে এবং উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই ওপর থেকে মাটি সরিয়ে ফেলায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে মাটি বিক্রি অব্যাহত থাকলে একসময় ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন,এ বিষয়ে কেও কোন   অভিযোগ করেনি,তবে কেও অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।