ফুলবাড়ী সীমান্তে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর, বিচার এখনও অধরা দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৫ রেজাউল ইসলাম।। সীমান্তে নির্মমভাবে প্রাণ হারানো কিশোরী ফেলানীর হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলো।২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী। তার মৃতদেহ দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাটাতারে ঝুলে ছিল। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার ঝড় তুলেছিল। কিন্তু ১৪ বছর পেরিয়েও ফেলানীর পরিবার তার হত্যার ন্যায়বিচার পায়নি। ফেলানীর পরিবার ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায় থাকত। তার বিয়ে বাংলাদেশে ঠিক হওয়ায় তাকে কাটাতার পেরিয়ে দেশে ফিরতে হয়। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে তার বাবা নূরুল ইসলাম কাটাতার পেরিয়ে এলেও ফেলানী কাটাতার টপকানোর সময় বিএসএফ-এর গুলিতে বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আধাঘণ্টা ছটফট করে মৃত্যুবরণ করে সে। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে তার মৃতদেহ কাটাতারে ঝুলে থাকে। ফেলানীর হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ-এর বিশেষ আদালতে ফেলানীর বাবা ও মামা সাক্ষ্য দেন। কিন্তু ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে দুইবার বিশেষ আদালত অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর পরিবার ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’-এর সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে।রিট পিটিশনের শুনানি শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে শুনানি বারবার পিছিয়ে যায়। ২০২০ সালের পর থেকে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত শুনানি হয়নি। ফেলানীর পরিবার আজও আশায় বুক বেঁধে আছে, কিন্তু ন্যায়বিচারের কোনো আভাস দেখা যায়নি। ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, “১৪ বছর হয়ে গেল, এখনও মেয়ের হত্যার বিচার পাইনি। কয়েকবার শুনানির তারিখ দিলেও সব পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে আমরা বিচার পাইনি। আশা করি নতুন সরকার আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সঠিক বিচার নিশ্চিত করবে।”ফেলানীর মা জাহানারা বেগম একই রকম হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বহুবার বিচারের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের বিপক্ষে লড়তে পারেনি। বর্তমান সরকার মেয়ে হত্যার বিচার করবে বলে আশা করছি।”স্থানীয়দের মতে, ফেলানীর হত্যার সুষ্ঠু বিচার হলে সীমান্তে হত্যা কমে আসবে। কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, “ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলা তালিকাভুক্ত রয়েছে। দ্রুত শুনানি হলে মামলাটির অগ্রগতি হবে। এই বিচার নিশ্চিত হলে বাংলাদেশি এবং ভারতীয় নাগরিক উভয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।”ফেলানীর হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো জাতিকে আহত করেছে। সীমান্তে নিরীহ মানুষের জীবন যেন আর এভাবে ঝরে না যায়, সেই দাবি এখন আরও জোরালো। ফেলানীর বিচারহীনতার এই দীর্ঘ প্রতীক্ষা শুধু তার পরিবারের নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই করা সকল মানুষের জন্য একটি করুণ উদাহরণ। SHARES সারা বাংলা বিষয়: