বিধবার ঘর ভেঙে জায়গা দখলের অভিযোগ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:০০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২৫

মো. আজিজার রহমান।।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় আমেনা বেওয়ার নামে বিধবা অসহায় মহিলার ঘর ভেঙ্গে দিয়ে জোরপূর্বক জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে খানসামা উপজেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবীকৃত নেতা আইয়ুব আলী, আতিয়ার রহমানসহ আরো কয়েক জনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের মারগাঁও গ্রামে। এই ঘটনার জেরে শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকেলে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত না হলেও, আহত হন বেশ কয়েকজন। জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে মৃত মো. হাফিজুর রহমান মারগাঁও মৌজায় ২৮০১ দাগে ৩ শতাংশ জমি মারগাঁও নবজাগরণী ক্লাবের নামে শর্তসাপেক্ষে দান করেন। শর্তে তিনি লিখেন, দানকৃত সম্পত্তিতে যে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করা হবে সেই প্রতিষ্ঠানটি যদি নিয়ম মাফিক চলে এবং কোন সময় বিলুপ্ত না হয় তাহলে সেই সম্পত্তিটি প্রতিষ্ঠানের নামে থাকবে এবং যদি কখনো কমিটি কিংবা প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়, তাহলে সেই সম্পত্তিটি সাবেক মালিক বা তার উত্তরাধিকারীরা, সমাজে ভালো কাজে যে কাউকে দান করে দিতে পারবেন। এরপরে ১৯৮৯ সালের ২২ মে ক্লাবটির নিবন্ধন পেয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। ১০ বছর পর ক্লাবটির ভবন ও কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ক্লাবটি বিলুপ্ত হওয়ায় মৃত মো. হাফিজুর রহমানের ছেলে রশিদুল ইসলাম আমেনা বেওয়া নামে এক বিধবা অসহায়কে মৌখিকভাবে থাকার জন্য অনুমতি দেন। সেই থেকে বিধবা ওইখানেই বসবাস করে আসছেন। সেই ঘর ভেঙে দিয়ে ছাউনী ছাড়া পাট খড়ি দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করেন তারা। সেই ঘরে ঝুলিয়ে দিয়েছে জুলাইয়ের শহীদ আবু সাঈদের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার। এ বিষয়ে বিধবা আমেনা বেওয়া বলেন, ক্লাবটি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছিলো। আমি মানুষের বাসায় কাজ করি। আমার থাকার জায়গা নাই। তাই ক্লাবটির জমি দাতা আমাকে থাকতে দেন। হটাৎ করে বৃহস্পতিবার ৩০জনের মতো মানুষ এসে আমার ঘরটা ভেঙ্গে দেয়। এতে আমি খুব অসহায় হয়ে পরি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। বিধবার বড় ছেলে আমজাদের কাছে জানতে চাইলে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা কেউ বাসায় ছিলাম না। হঠাৎ করে তারা এসে আমার মায়ের একমাত্র ঘরটি ভেঙ্গে দেয়। এর আগে আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করলে আমি দিতে অস্বীকার করি। চাঁদা না দেওয়ায় আমার মায়ের ঘরটি ভেঙ্গে দিল। আমার মা প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছে। ওরা বলতেছে ক্লাবের জায়গা। কিন্তু আমরা সেখানে এসে কোন ক্লাব পাইনি। তাছাড়া জমি দাতা আমার মাকে থাকতে দিয়েছে। তারা যদি বলে ছেড়ে দিতে আমরা এখনই ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। মারগাঁও নবজাগরণী ক্লাবের সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আহমেদ লিমন বলেন, আমরা দুই মাস ধরে ওদের সঙ্গে বসতে চাচ্ছি কিন্তু বসে না। জমিদাতা চাচাকে আমরা বলি যে ক্লাবটি উদ্ধার করা যায় কিনা। চাচা কোন সহযোগিতা করেনি। এরপর আমরা সবাই মিলে চিন্তা করি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা আছে সবাই মিলে ক্লাবটা উদ্ধার করা দরকার। একাধিকবার থানায় গেলেও কোন সুরাহা হয়নি। এরপর আমরা যারা একসঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছিলাম তারা গিয়ে ক্লাবটি উদ্ধার করি। তারা হল, আতিয়ার রহমান, নাজমুল, শরিফুল ইসলামসহ আরো অনেকে। এরপর সবাই মিলে ক্লাবটা আমরা দখল করে নিলাম। মারগাঁও নবজাগরণী ক্লাবের সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন, চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণীতভাবে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই দাবি করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিধবার বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শরিফুল ইসলামকে সংযুক্ত করার ঘটনা জানতে চাইলে। তিনি বলেন, আমার নাম উল্লেখ করে লিমন যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন। সেই সাথে লিমনের বক্তব্যর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেখানে আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কর্মী বা সমন্বয়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম না। ক্লাবের ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজমূল হক বলেন, দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।