বানারীপাড়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আলোচনাসভা ও র‍্যালি

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২৫

আছিবুল ইসলাম।।

বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার, সমতা এবং ক্ষমতায়নের পক্ষে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছর ৮ই মার্চ গুরুত্বের সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। বানারীপাড়ায়ও দিনটি এক বিশেষ গুরুত্বের সাথে উদযাপিত হয়েছে। শনিবার, ৮ মার্চ, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক বর্ণিল র‍্যালি এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়। প্রথমে একটি বৃহৎ র‍্যালি বের হয়, যা উপজেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশ থেকে শুরু হয়ে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। র‍্যালিটি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রা করে, সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ দাঁড়িয়ে একত্রিত হন এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমান অধিকার দাবি করেন। র‍্যালিটি যেন এক শক্তিশালী বার্তা প্রদান করছিল, যে নারীরা সমাজের অঙ্গ এবং তাদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। এরপর, উপজেলা সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় একটি ব্যাপক আলোচনা সভা, যেখানে নারী ক্ষমতায়ন, সম অধিকার এবং নারীদের নেতৃত্বে ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ এবং প্রতিটি স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বায়জিদুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “নারী-একটি শব্দ, যা শক্তি, সংগ্রাম, ভালোবাসা ও সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। নারী দিবস উদযাপন শুধু নারীদের জন্য নয়, এটি পুরুষদেরও বোঝার এবং তাদের মনোভাব পরিবর্তন করার একটি সুযোগ। নারীর অগ্রযাত্রা সমাজ ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর নির্ভরশীল।” তিনি আরো বলেন, “বিশ্বব্যাপী নারী দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং সমান অধিকারের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমরা যদি নারীর প্রতি সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমরা একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে সক্ষম হব।” এছাড়া, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দিপীকা রাণী সেন, উপজেলা কৃষি ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তনয় সিংহ, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা পার্থ সারথি দেউরীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং নারীরা এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, নারীদের সমান অধিকার বলতে বোঝানো হয়, নারীদের সমাজে পুরুষের সমান সুযোগ, মর্যাদা, এবং অধিকার নিশ্চিত করা। এটি একটি সামাজিক নীতি, যা পৃথিবীর প্রতিটি নারীকে তাদের জীবন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষদের সমান অধিকার দেয়। নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা শুধু নারীদের জন্যই নয়, বরং পুরো সমাজের উন্নতির জন্যও অত্যন্ত জরুরি। নারীরা যখন সমান সুযোগ পায়, তখন তারা নিজেদের সম্ভাবনা পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং সমাজের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে একটি সমাজে নানা ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। প্রথমত, নারী যখন অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে শক্তিশালী হয়, তখন দেশও সামগ্রিকভাবে উন্নত হয়। এছাড়া, নারীরা সমাজে তাদের ভূমিকা পালন করলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও শক্তিশালী হয়। ইসলামের ইতিহাসে নারীদের অধিকার ও মর্যাদার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ রয়েছে। রাসূল (সঃ) নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তাদের অধিকারকে সম্মান জানাতেন। ইসলাম নারীকে শুধু স্বামী বা পিতা কিংবা সন্তানের ভূমিকা দিতে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং নারীর যথাযোগ্য মর্যাদাও প্রতিষ্ঠা করেছে। রাসূল (সঃ) এর সময়ে, নারীদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। ইসলাম ধর্ম নারীদের মাতৃত্বের মর্যাদা, শিক্ষা গ্রহণের অধিকার, উত্তরাধিকারী হওয়ার অধিকার এবং ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পদের অধিকার প্রদান করে। পরিশেষে, যদি আমরা নারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান, মর্যাদা এবং সকল সুযোগ নিশ্চিত করি, তবে আমরা একটি এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব যেখানে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ভিত্তি স্থাপন করবে, যেখানে সকল সদস্য—নারী ও পুরুষ—একসাথে অধিকার ও সুযোগের সাথে সমাজের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারবেন। এমন সমাজে প্রতিটি নারী তার সম্ভাবনা পূর্ণভাবে বিকাশ করতে সক্ষম হবে, আর আমাদের সমাজ হবে আরও ন্যায্য, উন্নত এবং সবার জন্য সমান সুযোগ প্রদানকারী।