৭১’র খেতাবপ্রাপ্ত নারী বীরমুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২৫

রাখী গোপাল দেবনাথ।।
কিশোরগঞ্জের নিকলীর ৭১’র খেতাবপ্রাপ্ত নারী বীরমুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) আর নেই।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোরে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে তিনি মারা যান।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। তার বাবার নাম সোনাফর মিয়া এবং মায়ের নাম দুঃখী বিবি। তিনি নিঃসন্তান। মুক্তিযুদ্ধের আগেই মারা যান স্বামী কিতাব আলী। নিকলীতে সখিনাকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের কাছে থাকতেন। সেখানেই মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক নাহিদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন
সখিনা বেগম বড়মাইপাড়া গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। মঙ্গলবার ভোর ৫টার সময় তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোতা মিয়া বলেন, গুরুই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমকে দেখভাল করার জন্য কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর হিলচিয়া ভাগ্নির কাছে থাকতেন। সেখানে মারা গেছেন। মঙ্গলবার আসর নামাজ বাদ গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সখিনা বেগমের গ্রামে শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা মজুমদার,উপজেলা প্রশাসন,
নিকলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড,
সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জামেল হক আবির,নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. বদরুল মোমেন মিঠু, সহকারি এটর্নি জেনারেল এ এম জামিউল হক ফয়সাল, নিকলী রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের  আহবায়ক খাইরুল মোমেন স্বপনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা মজুমদার,
নিকলীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সখিনা বেগম  সশস্র যুদ্ধ করেন। । ভাগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা  মতিউর রহমানের  সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হলে  সখিনা বেগম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা বেগম গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে সাথে নিয়ে আসেন একটি ধারালো দা। দা দিয়েই নিকলীর পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। সখিনা বেগমের ওই দা বর্তমানে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।