ইতিহাস গড়লো মনপুরার ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা: ৪৬ বছরে প্রথমবার জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২৫

মোঃহোসাইন ।।

শিশুবান্ধব সেফটি ডিভাইস ও কৃষিবান্ধব যন্ত্রসহ ৩টি উদ্ভাবনী প্রজেক্ট উপস্থাপন করে মনপুরা সাইন্স এন্ড ইনোভেশন ক্লাব।

মোঃ হোসেন  | মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি

ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার ৪৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় অংশগ্রহণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে “মনপুরা সাইন্স এন্ড ইনোভেশন ক্লাব”। তাদের এই অর্জন পুরো জেলার জন্য বয়ে এনেছে অনন্য সম্মান।

গত ১৮ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত “৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলা ২০২৫”-এ ভোলা জেলার প্রতিনিধি হিসেবে এই ক্লাবের তিনজন উদ্যমী সদস্য—মোঃ তাহাসিন, মোঃ ফজলে রাব্বী ও মোঃ সামি—গর্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ থেকে উঠে এসে জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের মেধার প্রতিফলন ঘটানোয় তারা প্রশংসিত হয়েছেন।

এই মেলায় মনপুরা সাইন্স এন্ড ইনোভেশন ক্লাব তাদের উদ্ভাবিত তিনটি ব্যতিক্রমধর্মী ও জীবনঘনিষ্ঠ বিজ্ঞান প্রজেক্ট উপস্থাপন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রজেক্টগুলো হলো:

১. চিলড্রেন সেফটি ডিভাইস (Children Safety Device):শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা রোধে এই ডিভাইসটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। মাত্র ৮ গ্রাম ওজনের এই ডিভাইসটি শিশুর শরীরে লাগানো থাকলে, শিশু পানিতে পড়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অভিভাবকের ফোনে কল চলে যাবে এবং একই সাথে বাসায় উচ্চস্বরে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীরা ডিভাইসটিকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করছেন। পরবর্তী ধাপে শিশুর কোমরে ৫০ গ্রামের একটি বেল্ট যুক্ত করা হবে, যেখানে থাকবে গ্যাস-বেলুন। শিশু পানিতে পড়ার সাথে সাথেই বেলুনটি ফুলে উঠে তাকে পানিতে ভাসিয়ে রাখবে, যা উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেবে।

২. ফার্মার অ্যাসিস্ট্যান্ট মেশিন (Farmer Assistant Machine):কৃষিকাজে শ্রম ও সময় বাঁচাতে এই পরিবেশবান্ধব যন্ত্রটি একটি যুগোপযোগী উদ্ভাবন। যন্ত্রটি একাই ৪-৫ জন কৃষকের কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম, যা কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

৩. ফার্মার সান সেফটি ক্যাপ (Farmer Sun Safety Cap):কৃষকদের প্রখর রোদ থেকে সুরক্ষা দিতে এই বিশেষ ক্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। মাত্র ৫০০ গ্রাম ওজনের এই ক্যাপটি সূর্যের তাপ থেকে মাথাকে বাঁচানোর পাশাপাশি ইউনিক ডিজাইনের মাধ্যমে মাথার চারপাশে বাতাস সরবরাহ করবে, যা কৃষককে আরাম দেবে।

মনপুরা সাইন্স এন্ড ইনোভেশন ক্লাবের মূল উদ্যোক্তা এবং আবিষ্কারক মোঃ তাহাসিন তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চেয়েছি আমাদের উদ্ভাবন যেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভবিষ্যতে মানুষের জীবনকে আরও সহজ ও আধুনিক করার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখতে চাই।”

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মনপুরার মতো একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ থেকে উঠে আসা এই তরুণ বিজ্ঞানীদের সাফল্য প্রমাণ করে, সুযোগ এবং प्रोत्साहन পেলে দেশের যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থীরাই জাতীয় পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারে। তাদের এই অর্জন নিঃসন্দেহে মনপুরার আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে।