সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের দাবি বরগুনা ৩ আসনটি পুর্নবহাল চাই দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২৫ বরগুনা জেলার সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের জন্য বরগুনায় পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রশাসনিক কাঠামো, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নের বাস্তব প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এই দাবি বাস্তবায়নের এখনই সময় এসেছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন নাগরিকরা। ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বরগুনা অঞ্চলে তিনটি পৃথক রাজনৈতিক এলাকা ছিল, যা স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনে তিনটি পৃথক আসন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০১ সাল পর্যন্ত বরগুনায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল — পাথরঘাটা-বামনা, বেতাগী-বরগুনা, আমতলী-তালতলী। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে আমতলী-তালতলী আসনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বরগুনা-১ এর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বরগুনাবাসীর মধ্যে এখনও অসন্তোষ ও বঞ্চনার অনুভূতি বিদ্যমান। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৬(২) ধারা অনুযায়ী আসন বিলুপ্তির সময় প্রশাসনিক কাঠামো, জনসংখ্যা, আয়তন ও ভৌগোলিক বাস্তবতা যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। বিশেষ করে আমতলী ও তালতলীর মতো দুটি বড় উপজেলা বৃহৎ সংসদীয় আসনের বাইরে পড়ে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বরগুনা জেলার সর্বস্তরের জনগণ, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক নেতারা তিনটি আসন পুনর্বহালের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। তারা মনে করেন, এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের বিষয়। এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং বিএনপি’র প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সাবেক (এপিএস) ও বরগুনা জেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য ওমর আবদুল্লাহ শাহীন বলেন— “বরগুনার সুষম ও সবক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বরগুনার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করা অপরিহার্য। তিনটি আসনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর মহান সংসদে পৌঁছে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উন্নয়ন ও নদীভাঙন প্রতিরোধসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বরগুনার বিশাল ভৌগোলিক বিস্তার ও বহুবিধ চাহিদার যথাযথ সমাধানের জন্য তিনটি স্বাধীন আসন ছাড়া বিকল্প নেই। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং জেলা ও দেশের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় ও বাস্তব পদক্ষেপ।” আমতলী উপজেলা যুবদলের সভাপতি কবির ফকির বলেন: “বরগুনার মানুষ বহুদিন ধরে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। সাড়ে তিন লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা, উন্নয়ন ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য সাবেক বরগুনা-৩ আসন পুনর্বহাল করা অতীব জরুরি। একটি সংসদ সদস্যের পক্ষে এত বিশাল এলাকা সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করা অসম্ভব। তাই আমরা দাবি জানাই, যেন বরগুনার প্রতিটি অংশই তার ন্যায্য কণ্ঠস্বর পায়, যেন উন্নয়নের সুফল সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের এই দাবির প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই সংবেদনশীল হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।” আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন“আগে যখন তিনটি সংসদীয় আসন ছিল, তখন বরাদ্দ ও প্রশাসনিক কাজের ভারসাম্য ছিল এবং উন্নয়নের ছোঁয়া আমতলী-তালতলীর গায়ে লেগেছিল। তবে এখন দুই আসনে সে সুযোগ-সুবিধা কমে গেছে, শুধু তাই নয় আমতলী-তালতলীর বর্তমান উন্নয়ন ছোয়াটা এত দূরে এগিয়ে গিয়েছে যে আমতলী-তালতলী মহাসড়ক থেকে গর্ভবতী মহিলার চলাফেরা করলে গর্ভপাত আমতলী-তালতলী মহাসড়কেই হয়ে যাবে। এই বৈষম্যের অবসান করতে হলে তিনটি আসনই পুনরায় ফিরিয়ে দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়নের চাহিদাও বেড়েছে, কিন্তু আসন কম হওয়ায় বাজেট ও প্রতিনিধি সংখ্যা কমে যাওয়ায় বরগুনাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে।” বর্তমানে আমতলী ও তালতলী উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় চার লক্ষ ছাড়িয়েছে এবং আয়তন প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটার। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী একটি পৃথক সংসদীয় আসন থাকা সময়োপযোগী ও যৌক্তিক দাবি বলে মনে করছেন তারা। সাধারণ জনগণের অভিমত, একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে এত বৃহৎ এলাকার কার্যকর প্রতিনিধিত্ব করা কঠিন, যার ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিলম্ব এবং রাজনৈতিক সচেতনতায় হ্রাস ঘটে। বরগুনার একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি কামনা করে বলা হচ্ছে— “আমরা রাজনৈতিক সুবিধা চাই না, চাই ন্যায্য অধিকার। বরগুনার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করা হোক।” অতীতে বরগুনা-১ (সদর ও বেতাগী), বরগুনা-২ (পাথরঘাটা ও বামনা), বরগুনা-৩ (আমতলী ও তালতলী) আসনগুলো ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে আসন সংখ্যা তিন থেকে কমিয়ে দুই করা হয়—বরগুনা-১ (সদর, আমতলী, তালতলী) এবং বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বেতাগী, বামনা)। এই পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনিক জটিলতা ও নির্বাচনী সময় পরিবহন সমস্যা বেড়েছে। বিশেষত পায়রা ও বিষখালী নদীর বিভাজন পূর্ব ও পশ্চিম বরগুনার যোগাযোগকে কঠিন করে তুলেছে। এর ফলে আমতলী ও তালতলীর প্রায় চার লাখ মানুষের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চনা ঘটেছে। বর্তমানে বরগুনা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৪ জন এবং বরগুনা-২ আসনে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৩০ জন। শুধুমাত্র আমতলী ও তালতলী মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ জন, যা একটি পূর্ণ সংসদীয় আসনের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এই দাবি আদায়ে বরগুনাবাসী প্রত্যাশা করছেন দ্রুত প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যাতে তারা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব পেতে পারে। মানাফি ইসলাম নাজমুল।। SHARES সারা বাংলা বিষয়: