এস.এম আবু রায়হান।। মৌলভীবাজার জেলায় প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার এর নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, এতে উপদেষ্টাদের সম্মতিক্রমে মাহমুদুর রহমান কে সভাপতি ও শাহিন আহমদ কে সাধারণ সম্পাদক এবং মাহিম আহমেদ কে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।

মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন, এমন খবর পেলেই ছুটে যান তাঁরা। ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে যান রোগীর হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে ফেরেন হাসিমুখে। রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজারের একদল তরুণ এভাবেই স্বেচ্ছায় রক্ত দেন। আবার প্রয়োজনীয় রক্ত রোগী ও স্বজনদের ব্যবস্থা করে দেন। এই তরুণেরা স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংগঠন ‘রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার তৈরি করেছেন। স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেন তৈরি করেছেন রক্তের বন্ধন।

রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার এ উপলক্ষে কমিটি গঠন করা হয়েছে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এলাকার অনেক অসুস্থ রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁর বন্ধু সহ কয়েকজন মিলে এ বিষয়ে কিছু করার উদ্যোগ নেন। পরে তাঁরা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠান করেন রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন । বর্তমানে পাঁচ হাজার তরুণ রক্তদাতা সদস্য তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে ৩৫সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রক্তদাতারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন।

রুবেল হোসেন শিপন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটি গঠন করার আগে এলাকার কারও রক্তের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় রক্তের গ্রুপ জেনে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতাম। তবুও মানুষ তেমন সাড়া দিত না। আর এখন রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সংগঠনটি মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।’

কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজারের টাট্টিউলি গ্রামের শিউলি বেগম গত কয়েক বছর আগে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। চার বছর ধরে প্রতি মাসে শিউলি বেগমকে O+ পজেটিভ এক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। শিউলির জন্য নিয়মিত রক্তদাতা জোগাড় করে দেয় রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন শিউলির মা মুর্শিদা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের বাবা বেঁচে নেই। মেয়ের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ার পর রক্ত জোগাড় করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যোগাযোগ করেও রক্তের ব্যবস্থা হচ্ছিল না। পরে রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজারের সংগঠনটির কথা জানতে পেরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর পর থেকে আমাকে আর রক্তের চিন্তা করতে হয়নি। রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশনের ভাইয়েরা আমার যে উপকার করছেন, তা আমি জীবনেও ভুলব না।’

গত বুধবার রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন একটি মৌলভীবাজার সদর হসপিটালে রক্ত মেনেজ করে দিয়েছেন রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ। তিনি দৈনিক দেশ সেবা প্রতিনিধি কে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি অনেক বার রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো মানুষের উপকার হয়, তাহলে ক্ষতি কী? রক্ত দেওয়ার পর শিউলির মায়ের হাসিমাখা মুখ দেখে যে প্রশান্তি পেয়েছি, লাখ টাকা দিলেও ওই সুখ পেতাম না।রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাঁদের কাছে যে কেউ রক্ত চাইলে রোগীর ঠিকানা, হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নাম জেনে নেন। এরপর ওই এলাকায় থাকা স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করে দেন।

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, শরীরের লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ১২০ দিন। তাই কেউ যদি রক্তদান না–ও করেন, তাহলে সেই রক্তকণিকা ১২০ দিন পর নষ্ট হয়ে শরীরের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশে যায়। তাই সুস্থ মানুষের চার মাস পরপর রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই। আর রক্তদান ও মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশনের তরুণদের রক্তদানের উদ্যোগ এখন মৌলভীবাজার উপকূলীয় জনপদে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই তরুণেরা রাতদিন, ঝড়বৃষ্টি অপেক্ষা করে মানুষের পাশে যান, রক্ত দেন। তাঁরা সত্যিকারের মানবপ্রেমী। রক্তদান ও মানকল্যাণ ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার তাদের একটি স্লোগান রয়েছে : “রক্ত দিন জীবন বাঁচান””হাঁসবে রোগী বাঁচবে প্রাণ”।