ওমান ক্রিকেটে একজন বাংলাদেশি: তাসকিন আহমেদ রিয়াদ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
মামুন রাফী।। জন্ম ও প্রাথমিক জীবন: তাসকিন আহমেদ রিয়াদ, যিনি তাসকিন-রিয়াদ নামেই বেশি পরিচিত, ১৯৯১ সালের ২ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আগ্রহ তাসকিনকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তোলে। তার প্রথম ক্রিকেট ব্যাটটি উপহার দেন তার বাবা, যা তার জীবনের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। তাসকিন আহমেদ রিয়াদ তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন পিরোজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটে তার অগাধ অনুরাগ ও প্রতিভা প্রকাশ পেতে থাকে। স্কুলে পড়ার সময়ই স্থানীয় ক্রিকেটে অংশ নিয়ে তিনি নিজের প্রতিভা দেখাতে সক্ষম হন। তার মা-বাবার অনুপ্রেরণা ও সমর্থন তাকে এই পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে ক্রিকেটে প্রবেশ: তাসকিন আহমেদ রিয়াদ বাংলাদেশে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন ঘরোয়া পর্যায়ে। তিনি ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোর হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেন। এ সময়ই তার প্রতিভা সবার নজর কাড়ে। তবে এই যাত্রা ছিল মোটেও সহজ নয়। প্রথমে ঢাকায় একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি তার মায়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চান। তার মা প্রথমে তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরে তাকে অর্থ সংগ্রহ করে দেন। ঢাকায় যাওয়ার পথে বাবাকে বিষয়টি জানালে, তার বাবা অত্যন্ত খুশি হন এবং তাকে আর্থিকভাবে আরও সহযোগিতা করেন। বাবার এই প্রেরণাই তাসকিন আহমেদ রিয়াদের  ক্রিকেট জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। এরপরে তিনি কোচদের তত্ত্বাবধানে তার স্কিল উন্নত করেন এবং নিজের প্রতিভার পরিচয় দেন।ওমানে ক্রিকেটের যাত্রা: বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু সফলতা অর্জনের পর (কোন অজানা কারণে) তাসকিন তার পরিবারের সঙ্গে ওমানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ক্রিকেটের প্রতি তার অদম্য আগ্রহ এবং পরিশ্রম তাকে ওমান ক্রিকেট বোর্ডের নজরে আনে। প্রথমে তিনি ব্যাংক দোফার টিমের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশনে খেলার সুযোগ পান। সেখান থেকে তার প্রতিভার বিকাশ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তিনি ওমান জাতীয় পর্যায়ের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০১৫ সালে ওমান প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকের মাধ্যমে তিনি প্রথমবার সবার নজরে আসেন। মাস্কাট সিটির হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি ওমানের ক্রিকেট মহলে তার স্থান আরও সুসংহত করেন। তবে ওমান ক্রিকেটে জায়গা করে নেওয়া ছিল মোটেও সহজ নয়। সেখানে পাকিস্তান ও ভারতের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল তাকে। ওমানে শুরুর দিকে তাকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।মধ্যপ্রাচ্যের অতিরিক্ত গরম তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। শারীরিকভাবে ফিট থাকা, দক্ষতা উন্নত করা এবং মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি তার প্রতিভা প্রমাণ করেন। তাসকিন রিয়াদের সাফল্যের পেছনে তার পরিবার, কোচ এবং সতীর্থদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা সবসময় তার পাশে ছিলেন এবং তাকে তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছেন। তার কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ইনজুরি ও ক্যারিয়ারের শেষ: তাসকিন রিয়াদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় বাঁধা আসে ২০১৭ সালে। তিনি ডান পায়ের লিগামেন্ট (এলসিএল) ইনজুরিতে পড়েন। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও ইনজুরি পুরোপুরি সেরে না ওঠায় তিনি বেশ কয়েকবার একই সমস্যার সম্মুখীন হন। তার লিগামেন্টের ইনজুরির কারণে তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যক্তিগত জীবন ও শখ: তাসকিন আহমেদ রিয়াদ ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সংযত এবং পারিবারিক মানুষ। ক্রিকেটের বাইরে তাসকিন আহমেদ রিয়াদ ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তার এই শখ তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। পরিবারের সমর্থন ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব হতো না বলে তিনি প্রায়ই এ কথা বলেছেন। উত্তরাধিকার ও ভবিষ্যৎ প্রভাব: তাসকিন আহমেদ রিয়াদের জীবনের গল্প এক অনুপ্রেরণার নাম। তার কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় মনোভাব এবং সাফল্যের প্রতি নিষ্ঠা শুধু ক্রিকেটারদের জন্য নয়, বরং সবার জন্যই একটি অনুকরণীয় উদাহরণ। তাসকিন রিয়াদ ওমান ক্রিকেটে তার প্রতিভা ও পারফরম্যান্সের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন। তার জীবন ও ক্যারিয়ার শুধু ক্রিকেট নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প।