বাবার মৃত্যুর লাশ ঘরে রেখে পরীক্ষার হলে বেতাগীর খায়রুল বেপারী

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৫

অসীম দেবনাথ।।

মানব জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তের একটি হলো প্রিয়জনের মৃত্যু। সেই শোকের ভার নিয়েই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বরগুনার বেতাগীর পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাইরুল বেপারী। বাবার মৃত্যু শোক উপেক্ষা করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বুধবার ভোররাতে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন খাইরুলের বাবা আমজেদ বেপারী। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ৬৩ বছর বয়সী এই দিনমজুরের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে। পরিবারের জন্য এটি ছিল এক শোকাবহ মুহূর্ত। এমন সময় এসএসসি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামনে রেখে দাঁড়ায় খাইরুল। সকালেই ছিল তার ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের পরীক্ষা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে খাইরুল সবচেয়ে ছোট। তাঁদের বাড়ি বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ভাগলের পাড় গ্রামে। সংসারের আর্থিক অনটনের মাঝেও সে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। বাবার মতো খাইরুলও দিনমজুরের কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাত। বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে, আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই খাইরুলকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়। পরীক্ষার দিন সকালে বাবার লাশ ঘরে রেখে খাইরুল যায় বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। সেখানে ৬ নম্বর কক্ষে বসে পরীক্ষা দেয় সে। খাইরুলের এই সাহসিকতায় মুগ্ধ তার শিক্ষকরা ও স্থানীয় প্রশাসন। পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বজলুর রহমান জানান, ‘খবর শুনে আমি খাইরুলের বাড়িতে যাই এবং তাকে সান্ত্বনা দিয়ে সাহস জোগাই। এরপর সে মনোবল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো: বশির গাজী জানান, খাইরুলের এই পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশাসন অবগত রয়েছে। যাতে সে বাকি পরীক্ষাগুলোতেও অংশ নিতে পারে এবং মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর রাখা হবে। বুধবার আসর নামাজের পর আমজেদ বেপারীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। এদিকে এলাকার মানুষ খাইরুলের এই আত্মত্যাগ ও অধ্যবসায় দেখে আবেগাপ্লুত।