ভূমি অফিসে ফাইল গায়েব: জবাবদিহির দাবিতে সরব জনতা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৫
নাগরিকদের জমির ম্যাপ, খতিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র পাওয়ার স্বাভাবিক অধিকার আজ যেন একপ্রকার বিলাসিতায় রূপ নিয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের আলোকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব তথ্য সরবরাহ করার কথা থাকলেও, বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসে যেন সেই আইনের কোনো মূল্যই নেই।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের হাতে একটি সরকারি অফিসিয়াল জবাবের কপি এসেছে, যেখানে ১২ নং ক্রমিক এ চাহিত তথ্যের উত্তর হিসেবে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে, খতিয়ানের কাগজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র অফিস থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না করার কারণ হলো- সেগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মহাফেজখানা শাখায় পাওয়া যাবে এবং বানারীপাড়া ভূমি অফিস জড়াজীর্ণ থাকায়, নথিপত্র ক্ষতিকর প্রাণী ও ক্ষুদ্র জীবাণুর সংক্রমণপ্রবণ হওয়ায় সরবরাহ সম্ভব নয়।
এই ব্যাখ্যা শুধু অসংবেদনশীল নয়, বরং সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল। বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী, যেকোনো নাগরিক সরকারের কাছে যেকোনো তথ্য চাওয়ার অধিকার রাখেন এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সেই তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকার কথা। অথচ উপজেলা ভূমি অফিসের বক্তব্য অনুযায়ী, নথি সংরক্ষণের অব্যবস্থাপনা এবং ক্ষতিকর প্রাণী ও জীবাণু সংক্রমণ দেখিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। অথচ সরকারি দপ্তরে সংরক্ষিত নথিপত্রের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। তাহলে প্রশ্ন আসে—এই ব্যর্থতার দায়ভার কে নেবে?
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আমার দাদার জমির খতিয়ান পেতে আমি একাধিকবার আবেদন করেছি, কিন্তু শুধু ঘুরানো হয়েছে। কখনো বলে একটু সময় লাগবে, কখনো বলে জেলা অফিসে যান। এখন বুঝতেছি, ওরা ইচ্ছা করেই এসব ঝামেলা করে। আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জীবাণুর ভয় দেখিয়ে যদি তথ্য না দেয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়? সরকার তো বলে ডিজিটাল বাংলাদেশ, কিন্তু বাস্তব চিত্র কী?
এটি একটি হাস্যকর ও ন্যক্কারজনক উদাহরণ, যেখানে সরকারি কর্মচারী দায়িত্ব এড়াতে অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন। এমনকি অফিসিয়াল কাগজে জীবাণুর কথা বলে আইনি বাধ্যবাধকতাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়, অনেক উপজেলা ভূমি অফিসেই এখনও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনিক তদন্ত দাবি করে। প্রয়োজন হলে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও বিষয়টি আমলে নিতে হবে।
জনগণের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এমন চিত্র শুধু বানারীপাড়ায় নয়, সারা দেশের বহু উপজেলা ভূমি অফিসে বিদ্যমান। যদি এখনই প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে সেবা না পাওয়ার ভোগান্তির পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মাঝে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা আরও দুর্বল হবে।
মো. আছিবুল ইসলাম ।।