স্বামীর বন্ধুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ— অভিযুক্তের দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০২৫ রাজধানীর বাড্ডা থানায় এক চাঞ্চল্যকর মামলার সূত্র ধরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বন্ধুত্ব, বিশ্বাস এবং নারী নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু। এক নারী তাঁর স্বামীর বন্ধুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে অভিযুক্তের দাবি, পুরো বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সাজানো। অভিযোগকারী মোছাঃ সুইটি আক্তার (২৭) থানায় লিখিতভাবে জানান, তাঁর স্বামী সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে পারিবারিক কলহের কারণে তারা কিছুদিন আলাদা ছিলেন। অভিযুক্ত খায়রুল ইসলাম (৩৩) ও সুইটি আক্তারের (২৭) স্বামী মোঃ সাদ্দাম হোসেন ছিলেন বাল্যবন্ধু। শুধু তাই নয়, দুজনের বাড়িও একই এলাকায়—রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের খোর্দ কোমরপুর গ্রামে। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই খায়রুলের প্রতি সুইটি আক্তারের বিশ্বাস জন্মায়। তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য স্বামীর বন্ধু খায়রুল ইসলামের (৩৩) সাহায্য চান। খায়রুল তখন সুইটিকে জানান তিনি সাদ্দামের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু এই সুযোগে খায়রুল তাঁকে স্বামী সাদ্দামের সাথে দেখা করানোর কথা বলে ১০ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে বাড্ডা থানাধীন পশ্চিম মেরুল সাকিনস্থ ম-২৮/১, জামান সিএনজি পাম্পের পিছনে বাচ্চু মিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখেন। পরে ভিডিওটি দেখিয়ে বারবার ব্ল্যাকমেইল করেন। একইসঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন এবং ওই বাসায় স্ত্রীর পরিচয়ে থাকতে বাধ্য করেন। জোরপূর্বক আটকিয়ে রাখার বিষয়টি বাসা মালিক বাচ্চু মিয়া ও অনান্য ভাড়াটিয়া বুঝতে পারলে, খায়রুল ইসলাম সুইটিকে নিয়ে ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ রাত্রি বেলা মধ্যে বাড্ডা, কুমিল্লা পাড়া মাটির গলির জ-৫৫/২ জনৈক মান্নান মিয়ার বাসায় উঠেন। পরিবার ও বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সুইটি মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েন। জিম্মি থাকার ওই সময়ে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে, যখন তিনি জানতে পারেন—তাঁর স্বামী মোঃ সাদ্দাম হোসেন একদিন আগে, ২৪ ডিসেম্বর, মৃত্যুবরণ করেছেন। তখনও তিনি খায়রুলের ভাড়া বাসাতেই বন্দি ছিলেন। এই দুঃসংবাদ তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। এরপরও তাকে বাসা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তবে তাঁর সন্দেহ—এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, খায়রুলই আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। যাতে আমি তার নিয়ন্ত্রণেই থেকে যাই। ও প্রথম থেকেই আমাকে ফাঁদে ফেলে আটকে রেখেছে। এই মৃত্যু ছিল ওরই চক্রান্তের অংশ।” এই মন্তব্য মামলাটিকে আরও গুরুতর ও জটিল করে তোলে। যদিও এখনো স্বামীর মৃত্যুর বিষয়ে আলাদাভাবে কোনো অপমৃত্যু তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পায়নি। প্রায় পাঁচ মাস পর, ১০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে খায়রুল ইসলাম তাঁকে মারধর করে এবং জোর করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন, এরইমধ্যে খায়রুল তাঁকে গোপনে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন এবং পরে বিয়ের আশ্বাসে সময়ক্ষেপণ করেন। সময়ক্ষেপণের বিষয়টি সুইটি বুঝতে পেরে পুরো ঘটনা পরিবারকে খুলে বলেন এবং সাহস করে আইনি প্রতিকার চেয়ে ২৩ মে ২০২৫ ইং বাড্ডা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত খায়রুল ইসলাম অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ওই নারী স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিল। “এটা একটা পরিকল্পিত ফাঁদ, এখন কেউ কেউ এই ঘটনাকে ব্যবহার করে আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন ও সমাজে কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্যেই এ ধরনের মিথ্যা বানোয়াট নাটক সাজানো হয়েছে।” বিষয়টি মূলত ব্যবসায়িক ও সামাজিক বিরোধের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা আমাকে ফাঁসাতে চায়। বাসা মালিক বাচ্চু মিয়া নিশ্চিত করেছেন যে বাসাটি খায়রুল ইসলাম ভাড়া নিয়েছিলেন এবং সুইটিকে ‘স্ত্রী’ পরিচয়ে বাসায় এনেছিলেন।তিনি বলেন, “আমি খায়রুলকে চিনি। সে বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় বলেছিল তার স্ত্রীকে নিয়ে উঠবে। আমি সহ বাসার বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া কয়েকবার খাইরুলকে বাসায় আসতে দেখেছিল। অপর বাসা মালিক মান্নান মিয়া বলেন খায়রুল ও সুইটি আমার বাসায় ছিল, এর বেশি কিছু আমি জানিনা। সুইটি আক্তারের পরিবার জানায়, তাঁরা এই ঘটনার ন্যায়বিচার চান। সুইটির বড় ভাই রাশেদুল ইসলাম বলেন, “আমার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ওর স্বামীর মৃত্যুর পর পুরোটা সময় একজন অপরিচিত লোকের হাতে বন্দি ছিল। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি মামলা। উভয় পক্ষের বক্তব্য ও ডিজিটাল প্রমাণ (যেমন ভিডিও,সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড, লোকেশন ডেটা) যাচাই করা হচ্ছে। তবে আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছি। তিনি আরও বলেন: যেহেতু বাদী তাঁর স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, প্রয়োজনে অভিযোগের ভিত্তিতে বাদীনির স্বামীর মৃত্যুর বিষয়েও পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে, যদি প্রমাণের পর্যাপ্ততা থাকে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি সমাজে নারীর নিরাপত্তা, বিশ্বাস ও ন্যায়বিচারের প্রাপ্তির প্রশ্ন তোলে। যেখানে একজন নারী বিশ্বাস করে কারো সহযোগিতা নিতে গিয়েছিলেন, সেখানে তাঁকেই শিকার হতে হয় যৌন সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতনের। এ ঘটনাটি সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা, বন্ধুত্বের নামে প্রতারণা এবং রাজনৈতিক অপপ্রয়োগ—এই তিনটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছে। সুইটির বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে এটি নারীর প্রতি চরম অবমাননার একটি দৃষ্টান্ত। অপরদিকে, যদি খায়রুলের দাবি সত্য হয়, তবে রাজনৈতিকভাবে একজন নির্দোষকে ফাঁসানো হচ্ছে—যা আরও ভয়ংকর। এই ধরনের মামলা সমাজে নারীর ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক তদন্ত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া অনুচিত। মোঃ সজল সরকার।। SHARES সারা বাংলা বিষয়: