নিকলীতে পর্যটনশিল্পের প্রধান বাধা সুরু সেতু ও রাস্তার সেল দখল দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২৫ রাখী গোপাল দেবনাথ ।। কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধে এখন পর্যটকদের ভিড়। হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি ও সবুজ প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ সবাই।নদীর সাথে আকাশের মিতালী। নৌকায় চড়ে হাওরের বুকে ঘুরে বেড়ানো, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে সবাই। সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠেছে নিকলী বেরীবাঁধ। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন আনন্দঘন সময় কাটাতে। এই আনন্দ মাটি করে দেয় সুরু ব্রীজ ও সুরু রাস্তার সেল দখলের কারনে সৃষ্ট যানজট। নিকলীতে প্রবেশ পথ দুটি। ঢাকা – সিলেট বা পূর্বাঞ্চল থেকে নিকলী প্রবেশ পথে সবচেয়ে বড় বিপত্তির জায়গায় হচ্ছে পুড্ডা ব্রীজ। পুড্ডা ব্রীজ অপেক্ষাকৃত সুরু ও রাস্তার সেলগুলো দখলের কারনে সৃষ্ট হয় যানজট।প্রতিদিনই ১- ২ ঘন্টা সময় নষ্ট করে পর্যটকরা। ৫ ঘন্টা ভ্রমনের ২ ঘন্টা চলে যায় যানজটে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবের কারনে দিন দিন রাস্তার সেলগুলোর দখলের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।হওয়ারবাসীর যোগাযোগ সমস্যার কথা চিন্তা করে ১৯৯৪ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য আমির উদ্দিনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এই সেতু নির্মান করা হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার হলেও পর্যটন শিল্প এলাকা নিকলীর যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নয়ন হয়নি।নেওয়া হয়নি কোন বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা। পুড্ডা সেতু দিয়ে একটি বাস পারাপার হলে অন্যদিকে সৃষ্ট হয় দীর্ঘ যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নেয় যানজট নিরসনে।যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হয় পর্যটকরা। ব্রীজ থেকে পুড্ডা বাজারের তিন রাস্তার মোড়ের রাস্তার সেল দখল করার কারনে গাড়ী অবাধে যাতায়াত করতে পারে না। সেল দখল করে দোকানের পাশাপাশি বসে মাছের বাজার ও ফলের দোকান। অন্যদিকে উত্তর অঞ্চলের পর্যটকরা নতুন বাজারে সম্মুখ দিয়ে প্রবেশ করে। এখানেও রাস্তার সেলগুলোও রয়েছে দখলে।সেলগুলো দখলের কারনে মেইন রাস্তা থাকে দাড়িয়ে থাকা রিকশার দখলে। যানজট শুরু হয় সহজেই। পুড্ডা যানজট নিরসনে গ্রাম পুলিশ থাকলেও নতুন বাজারে নেই কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তবে জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায় জনগন। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে আগত পর্যটক গাড়ী চালক আব্দুল জলিল বলেন সারা বাংলাদেশের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলেও নিকলীর কোন উন্নয়ন নাই। এ রকম চিকন রাস্তা কোন পর্যটন এলাকায় নাই। বিগত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ‘নিকলী হাওর’ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এর প্রভাবে স্থানীয় অর্থনীতিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। এ পর্যটনকেন্দ্র কে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছে নৌকার মাঝি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগুলো।হাওর ভ্রমনের পাশাপাশি পর্যটকরা নিকলী মাছের আড়ৎ থেকে টাটকা ও সতেজ মাছ ক্রয় করছে। ফরমালিনমুক্ত সতেজ ও টাটকা মাছ ক্রয় করে পর্যটকরাও খুশি। নরসিংদী থেকে আগত পর্যটক মো: আজাদ মিয়া বলেন হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি টাটকা মাছের জন্য নিকলী বিখ্যাত। নিকলীর হাওরের মাছের স্বাদই আলাদা। ২০০০ সালে নিকলী উপজেলাকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল । পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রতিরক্ষা বাঁধ এখন হয়ে উঠেছে একটি পর্যটন কেন্দ্র। নিকলীর ছাতিরচরের নদী ভাঙন ঠেকাতে করচগাছ রোপণ করে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কেয়ার।যা অঞ্চলটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। বর্ষাকালে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্তের মানুষের অন্যতম গন্তব্যস্থল নিকলী। স্থানীয় মাঝি বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘সারা বছর আমরা বর্ষার অপেক্ষায় থাকি। হাওরে পানির সাথে আমাদের রোজকার ও বাড়ে। ময়মনসিংহ থেকে আসা পর্যটক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই সুন্দর। তবে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদারের পাশাপাশি বেড়িবাঁধ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পেলে পরিবার নিয়ে ঘুরে আরও বেশি আনন্দ পাওয়া যাবে।’ নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল মোমেন মিঠু বলেন, নিকলীবাসীর যোগাযোগের অন্যতম সংযুক সড়ক পুড্ডা ব্রীজ।যা নিকলীবাসীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবি। যা আমার বাবার ১৯৯৪ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছিল। পরবর্তী সময় আরো অনেক সাংসদ হয়েছে কিন্তু পুড্ডা ব্রীজের প্রশস্তকরন বা নতুন নির্মানের কথা কেউ চিন্তা করে নাই। যদি চিন্তা করত নিকলী আরো উন্নত হতো ।নিকলীর অনেক মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে।আশা করি স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ ও আকর্ষণীয় পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকবে।’ এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানা মজুমদার মুক্তি বলেন, নিকলীকে কেন্দ্র করে পর্যটনের উন্নয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি পর্যটন ব্যবস্থাপনার সার্বিক দিক তদারকি করবে।পাশাপাশি পুড্ডা ব্রীজ ও বাজারের সুরু রাস্তা পর্যবেক্ষন করেছি। রাস্তা ও ব্রীজের সমস্যা নিয়ে সড়ক অধিদপ্তরের সাথে আমরা কাজ করছি।আশাবাদী পর্যটন এলাকা নিকলীর সমস্যাগুলো তাড়াতাড়ি সমাধান হবে। SHARES সারা বাংলা বিষয়: