বয়স্কভাতার টাকা মেরে দিল আল-হেরার সুমন

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৪

নওগাঁর বদলগাছীতে বয়স্কভাতার টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কোলা ইউনিয়নের আল-হেরা টেলিকমের সুমনের হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেন কোলা ইউনিয়নের কোলা গ্রামের বাসিন্দা ফুল মোহাম্মদ। এই ফুল মোহাম্মদের বাড়িঘরের অবস্থা দেখলেই অনুমান করা যায় তাদের জীবন জীবিকার মান কেমন, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা কেমন হতে পারে।

সরকারি সুবিধাভোগীর আওতায় তিনি বয়স্ক ভাতা পান। মোবাইলের নগদ এ্যাকাউন্টের টাকা তুলতে গিয়েছিল আলহেরা টেলিকম নামক নগদ এজেন্টের দোকানে।অভিযোগ সুকৌশলে তার ভাতার টাকা মেরে দিয়েছে সেই দোকানের মালিক জুয়েল আরমানের ভাই সুমন হোসেন।এক মাস যাবৎ এর প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে গত ২৬ জুন সমাজসেবা অফিসসহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর টনক নড়ে সকলের।

গত ২৯ ও ৩০ জুন এলাকায় সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা গত ২৮ মে’র দুটি ট্রানজেকশনে দেখিয়ে বলেন, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে ১ম বার ফুল মোহাম্মদের নগদ আকাউন্ট থেকে আলহেরার নগদের উদ্দোক্তার নাম্বারে ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা ক্যাশ আউট করা হয় এবং পরে ৫টা ১৯মিনিটে একই নাম্বারে ১৮০০টাকা ক্যাশ আউট করা হয়। কিন্তু সুমন ১৮০০টাকা ভাতাভোগীর হাতে দেন এবং বাঁকি ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা সুমন কৌশলে আত্মসাত করেন। এদিকে ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা ক্যাশ আউট করা নিয়ে সুমনের ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণা বলে মনে করছেন তারা।

সরকারি বয়স্কভাতাভোগী ফুল মোহাম্মদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ মাটির বাড়ি এবং
দরজার সামনে বসে আছেন প্রতিবন্ধী স্ত্রী শরিফা। তিনিও সরকারি সুবিধাভোগীর আওতায় প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তিনি জানান, শেখ হাসিনা টাকা দেয়। ওই সুমন সেই টাকা তুলতে গেলে খরচ কেটে নেয়।অভিযোগে সৃত্রে জানা যায়, গত ২৮শে মে আলহেরা কসমেটিক্স ও আলহেরা টেলিকম নামক নগদ এজেন্ট ব‍্যাংকিং এর দোকানে ভাতার টাকা উঠাতে যায় ভূক্তভোগী ফুল মোহাম্মদ।

সুমন একবারের ভাতার টাকা বের করে দেন ভাতাভোগীকে। কিন্তু দুই বারের প্রাপ্য ভাতার টাকা তার মোবাইলের নগদ এ্যাকাউন্টে জমা ছিল। জানতে গেলে সুমন সেই টাকার কোনো খোঁজ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর ভূক্তভোগী বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে সুমনের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া তাদের এমন কর্মকান্ডের কারণে নগদ লেনদেন বন্ধ ছিল। তারপরও সংশোধন হয়নি তারা। তাই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বিচার হওয়া উচিত।

ফুল মোহাম্মদ বলেন, সুমনের কাছে গেলে সে আমাকে ১৮০০টাকা ধরিয়ে দেয় বলে এই টাকায় নাকি হামার নাম্বারে আসছে। কিন্তু আমার মোবাইলে দুই বার ভাতার টাকা এসেছে। তিনি বলেন, বাপো হামার ভাতার ট্যাকা মেরে দিসে দোকানদার। হ্যামি গরীব মানুষ বাপু। হামার সাথে সুমন এমনডা করলো ক্যানো? হ্যামি হামার ভাতার ট্যাকা ফেরত চাই!

স্থানীয়রা জানান, সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরপরই পানের দোকান থেকে জুয়েলের অর্থ সম্পদ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে সর্বত্র! তাদের ধারণা বছরের পর বছর এই ভাবে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।স্থানীয় জনি নামের এক নারী জানালেন, তাদের আগে ছিল পানের দোকান। এখন কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।

আরেক ব্যবসায়ী শামিম জানালেন, আমরা বহুদিন থেকে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ শুনে আসছিলাম। কিন্তু সঠিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেটা সে সুকৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে ফুল মোহাম্মদের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

আরেক ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী হতদরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করে নগদ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিচ্ছে। আর সহজ সরল ওই সব হতদরিদ্রদের পিন কোড নিজের কাছে রেখে বছরের পর বছর কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করছে। মেসেজ ডিলিট করে দেওয়া ও পিন নং না দেওয়া তাদের অভ্যেসে পরিণত হয়েছে।

এ ব‍্যপারে আলহেরা মোবাইল টেলিকমে কথা হয় সুমন হোসেন সাথে, প্রথমে তিনি বক্তব্য দিতে রাজিনা। এক পর্যায়ে গর্বের সহিত জানালেন আমি এই সেক্টরে খুব দক্ষ। কারো পিন কোডের সমস্যা হলে আমার কাছেই আসে। ফুল মোহাম্মদের আগের টাকা ছিল, সেটা আমার জানা ছিলনা। আমি ইচ্ছে করে করিনি, কোনো কারণে হয়তো আমার ভুল হয়েছে।এদিকে সুমনের সাথে কথোপকথনের সময় তার দোকানে একব্যক্তি আসলেন তার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা উঠাতে। মোবাইলটা দিয়ে দিলেন সুমনের হাতে। কোনো কিছু না বলাতেই কিছু টাকা বের করে দিলেন।

এ ব‍্যপারে আল-হেরা কসমেটিক্স ও আল-হেরা মালিক সুমনের ভাই জুয়েল আরমান সাথে কথা বলতে চাইলে প্রথমে তিনি রাজি হন নি পরবর্তীতে তিনি একসময় স্বীকার করলেন পিন না দেওয়া এটা একটা ব্যবসায়িক কৌশল। কারণ পিন না দিলে এই দোকানেই আসবে তারা। এছাড়া এটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা বলে জানালেন তিনি এবং বিষয়টি নিয়ে কিছু করার দরকার নেই বলে অনুরোধ করেন। ১৮০০ টাকার জায়গায় ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা কিভাবে ক্যাশআউট হয় এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেলেন।এ ব‍্যপারে কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর ইসলাম স্বপন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও মৌখিক অনেক অভিযোগ ছিল, কিন্তু প্রমাণ ছিলনা। এবার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আর সুমনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হওয়া উচিত বলে তিনিও মন্তব্য করেন।

এ ব‍্যপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাজীব আহম্মেদ মোবাইলে বলেন, ভাতাভোগী ফুল মোহাম্মদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে গিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে তার সত্যতা পেয়েছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তিনি বলেন, এরকম হতদরিদ্রদের টাকা যারা মেরে দেয়, তাদের বিচার হওয়া উচিত। আমরা বিষয়টি নগদকে জানিয়েছি, এখন তারা পদক্ষেপ নিবেন।