শেরপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্কুলের রেজুলেশন খাতা ছিনতাইয়ের অভিযোগ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২৪

শান্ত শিফাত।শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইকুড়া এআরপি উচ্চ বিদ্যালয়ে রেজুলেশন খাতা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে স্ত্রী হেরে যাওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ঢুকে রেজুলেশন খাতা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার এ অভিযোগ ওঠে।এ ঘটনার পর দেড় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও খাতা উদ্ধার করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। উল্টো ফলাফল বাতিলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিজয়ী প্রার্থী আলমগীর হোসেন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

এদিকে, চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনের ফলাফল বানচাল করতে নানাভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তাঁর ক্ষমতার দাপটের কাছে স্থানীয় কর্মকর্তারাও অসহায় বলে জানান একাধিক ব্যক্তি।

শুধু তাই নয়, খাতা ছিনতাইয়ের ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষকসহ কেউ এখন পর্যন্ত ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না।এদিকে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ইন্দনেই খাতা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

জানা গেছে, ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের পাইকুড়া এআরপি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য নির্বাচনের পর গত ১ জুলাই নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ঝিনাইগাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এতে প্রার্থী হন ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদত হোসেনের স্ত্রী নিলুফা আক্তার ও স্থানীয় সমাজসেবক মো. আলমগীর হোসেন।

একাধিক প্রার্থী হওয়ায় উপস্থিত ৯ জন সদস্য গোপন ভোট প্রদান করেন। এতে ৫ ভোট পেয়ে আলমগীর হোসেন নির্বাচিত হন। ৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হন চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিলুফা আক্তার।পরে সদস্যদের উপস্থিতি স্বাক্ষরসহ নির্বাচনের রেজুলেশন লেখা হয় রেজুলেশন খাতায়। নির্বাচনে স্ত্রীর পরাজিত হওয়ার খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে এবং নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন তাঁর ফুপাতো ভাই মুকুল মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ঢুকে ওই রেজুলেশন খাতা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান।

কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বাধ্য হয়ে বিজয়ী প্রার্থী আলমগীর হোসেন ঝিনাইগাতী থানায় ও ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। অভিযোগ রয়েছে, ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও একজন কর্মচারীর নিয়োগ রয়েছে।

ওই দুজনের নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্যই নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এ জন্য মোটা অংকের টাকাও লেনদেন হচ্ছে।এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে পূর্বঘোষিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করি। সভাপতি পদে সদস্যরা দুজনের নাম প্রস্তাব করায় কণ্ঠ ভোটের সুযোগ ছিল না।

ফলে আমি ৯জন সদস্যের হাতে ব্যালট বুঝিয়ে দিয়ে পাশের রুমে গোপনে দিতে বলি এবং তারা সেভাবেই ভোট প্রদান করেন। পরে সকলের সামনে ভোট গণনা করি। এতে আলমগীর হোসেন ৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিলুফা আক্তার পান ৪ ভোট।’শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘তখন কমিটির সদস্যসচিব প্রধান শিক্ষককে নির্বাচনী ফলাফলের রেজুলেশন লিখতে বলি। তিনি তার একজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে রেজুলেশন লিখে প্রায় শেষ করেছেন। সভাপতি পদে নির্বাচনে আলমগীর হোসেন বিজয়ী হয়েছেন- শুধু এই কথাটা লেখা বাকি আছে।

এমন সময় চেয়ারম্যান সাহেব একজন লোককে সঙ্গে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চান, নির্বাচন কি শেষ হয়েছে? আমি বললাম, জি শেষ হয়েছে, এখন রেজুলেশন লেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ দেখি খাতাটি চেয়ারম্যানের সাথের ছেলেটির হাতে চলে গেছে। তারা খাতাটি নিয়ে চলে যান। এমন নজিরবিহীন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বিষয়টি এমপি মহোদয় ও ইউএনও সাহেব অবগত আছেন এবং তারাই দেখছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোনকলে কথা হয় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেনের সঙ্গে। খাতা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কণ্ঠভোট না নিয়ে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কেন করা হয়েছে? নির্বাচনে অনিয়ম করায় আমি রেজুলেশন খাতা নিয়ে আমার কাছে রেখেছি।’

আপনি তো স্কুলের খাতা নিয়ে নিজের কাছে রাখতে পারেন না। তা ছাড়া অভিযোগ রয়েছে আপনি অফিস কক্ষে ঢুকে খাতা ছিনিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?- এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি আমাকে প্রশ্ন করার কে? আপনি আমাকে ফোন করেছেন কেন? আমার ইউনিয়নের স্কুল আমি বুঝবো, আপনি প্রশ্ন করার কে? আপনার কাছে কে অভিযোগ করেছে। প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষা অফিসার কি আপনার কাছে অভিযোগ করেছে?’

তখন তাকে বলা হয় যে বিজয়ী প্রার্থী আলমগীর হোসেন থানায় ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান শাহাদত বলেন, ‘আলমগীর এখানে কে? হ্যাঁ, খাতা আমার কাছে আছে। এটা আমি আর অফিস বুঝব।’

ভোটে বিজয়ী প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সদস্যদের ভোটে আমি বিজয়ী হয়েছি। অফিস থেকে খাতা ছিনতাই করে নেওয়ায় আমি কর্তৃপক্ষের পরামর্শে থানার ও ইউএনও মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। ঘটনাটি এমপি মহোদয় সম্পূর্ণ অবগত আছেন। সপ্তাহ হয়ে গেল আমি কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমি এই ঘটনার প্রতিকার চাই এবং বিজয়ী হিসেবে দায়িত্ব বুঝে পেতে চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিই। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’এ সময় খাতা উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।