নওগাঁয় প্রশ্ন ফাঁসে জড়ীত আলমগীর নিজে হয়েছেন কোটিপতি

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৪

সাইফুল ইসলাম।সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন এসএম আলমগীর কবির (৪৮)।

তিনি বেড়ে উঠেছেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নে গয়রা সরদারপাড়া গ্রামের সাধারণ এক দিন মজুর পরিবারে। প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থেকে অল্পদিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন নিজেকে অনেক বড় চাকরি জিবীর পাশাপাশি চাকরির কোচিং ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি।

পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির হঠাৎ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার এ রহস্য হিসেবে তিনি নিজ গ্রামের প্রায় একশ জনকে সরকারি চাকরি দিয়েছেন। এছাড়াও নওগাঁ, বগুড়া, রাজশাহী এবং ঢাকাসহ সারাদেশেই তিনি হাজার হাজার মানুষকে মোটা অর্থের বিনিময়ে সরকারী চাকুরি দিয়েছেন এই অবৈধ পন্থায়। এসব চাকুরি দেয়ার জন্য তিনি ঢাকা এবং বগুড়ায় ‘জব কর্ণার সাঁটলিপি এন্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট’ নামে কোচিং সেন্টার খুলে এসব চাকুরি প্রত্যাশিদের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার মোটা অর্থের বিনিময়ে ফাঁসের প্রশ্নপত্র সরবারহ করতেন। আর এভাবেই অবৈধ পন্থায় খুলেছে তার ভাগ্য।

আলমগীর কবিরের প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারটি সামনে আসার পর অবাক হয়েছেন তার প্রতিবেশীরাও। তবে এবিষয়ে মুখ খুলতে চায়না কেউ।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও তার বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ছাত্র জীবনে ছোট ভাই হুমায়ুন কবির সহ আলমগীর কবির অন্যের জমিতে কাজ করতেন। কিন্তু পিএসসিতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর চাকরি হওয়ার পর বদলে যেতে থাকে তাদের অবস্থা।

এরপর একই দপ্তরে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন সহকারী পরিচালক। আলমগীরের প্রতিবেশী আব্দুর রব জানান, গয়রা গ্রামে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে সরকারি চাকুরিজিবী নেই। সরকারি অফিসের পিওন থেকে শুরু করে উপসচিব এবং পুলিশ সুপার সবই আছে তাদের গ্রামে।

ছোট ভাই হুমায়ুন কবির ছিলেন সৌদি প্রবাসী গাড়ি চালক। সেখানে চাকরি ছাড়িয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন আলমগীর, পাইয়ে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চাকরি। ছোট বোন মিনিও একই মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে যোগ দেন। তিনি রাজশাহীতে কর্মরত। পিএসসিতে চাকরির পাশাপাশি আলমগীর বগুড়া ও ঢাকায় কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন।

এগুলোর মাধ্যমেই সরকারি চাকরি প্রার্থী জোগাড় করেন। তার বৃদ্ধ বাবা আবুল কাসেম বলেন, তার ছেলের ঢাকায় বিলাশ বহুল বাড়ি এবং গাড়ি থাকলেও গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছুই করেননি। মাঝে মধ্যে ব্যাক্তিগত গাড়িতে করে বাড়িতে আসেন এবং তাদের পরিবারের খরচ দিয়ে যায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি আলমগীর গ্রামের বাড়িতে ৯-১০ বিঘা জমি কিনেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না।

গ্রামের বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে জানা যায়, মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে রাতের বেলা বাড়িতে এলেও কারো সঙ্গে তেমন মিশতেন না আলমগীর। তবে এলাকার বেকার ছেলেদের সরকারি চাকুরি দেয়ার জন্য কয়েক মাস আগে বদলগাছী উপজেলার কোলা বাজারে ‘জব কর্ণার সাঁটলিপি এন্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের শাখা খোলেন। গত রেলওয়ের পরিক্ষার পর থেকে কোচিং সেন্টারটিও বন্ধ করে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসি’র দু’জন উপপরিচালক, দু’জন সহকারী পরিচালক সহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় তাদের। তার মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। বাকি ১১ জন দেননি। ফলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সিআইডি বলছে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মূলে ছিলেন ৩জন। তারা পিএসসির উপ-পরিচালক মোঃ আবু জাফর ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির। এই ৩ জনই মূলত প্রশ্নফাঁসে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। চক্রের অন্য সদস্যরা কেউ চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতেন, কেউ প্রশ্নপত্র পেয়ে তার সমাধান করতেন, আবার কেউ অর্থের লেনদেন করতেন। ইতোমধ্যে এসএম আলমগীর কবির কে পিএসসি থেকে বরখাস্ত এবং তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।