জয়পুরহাটে ৫টি উপজেলা ব্র্যাকের আলু বীজ রোপণ করে নিঃস্ব শতশত কৃষক

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪

মোঃ আল-আমিন।।জয়পুরহাট জেলার প্রায় উপজেলার ব্র্যাকের নিম্নমানের বীজ আলু রোপণ করে নিঃস্ব শতশত কৃষক। গজায়নি শতশত বিঘা জমিতে আলুর গাছ। ফলে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে ব্র্যাকের আলু বীজ রোপণ করে কৃষকরা। জেলা সদর ও কালাই ক্ষেতলালের অনেক আলু চাষী ব্র্যাকের আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু তাদের কারো জমিতে গজায়নি আলুর গাছ। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষি অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন৷ জেলার ধারকি এলাকায় বেলাগাড়ি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। মাথায় হাত দিয়ে চাতক পাখির মতো হতাশ হয়ে আলুর জমিতে পড়ে রয়েছে আলু চাষীরা।জানা গেছে, যারা ব্র্যাকের বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন তাদের কারো জমিতে আলুর গাছ বের হয়নি। অথচ পাশের জমিতে অন্য কোম্পানির বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন তাদের জমিতে সুন্দর ভাবে বের হয়েছে আলুর গাছ। বেলাগাড়ী মাঠে আলু চাষী এরফান আলী ১৩ বিঘা মনজুরুল ৩ বিঘা জামিল ৩ বিঘা ফরিদ ২ বিঘা জামিল ৩ বিঘা বজলু ৩ বিঘা হামিদ ৩ বিঘা ফারুক ২ বিঘা ছালাম ফকির ৮১ শতক৷ এভাবে শত শত বিঘা জমিতে কোন গাছ গজায়নি। তারা জানান, ব্র্যাকের বীজের খুব ভালো আলুর ফলন হয় বলে তারা এবারও ব্র্যাকের বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু তাদের কারো জমিতে আলুর গাছ বের হয়নি। কৃষক এরফান আলী জানান, তার ১৩ বিঘা জমিতে ব্র্যাকের বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন।তারও জমিতে কোন আলুর গাছ বের হয়নি। আর যে দু’একটা গাছ বের হয়েছে সেগুলো গাছের আলু পঁচে যাওয়ায় গাছ দুর্বল হয়ে মরে যাচ্ছে। এবার ব্র্যাকের বীজ আলু রোপণ করে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে আমাদেরভুক্তভোগী কৃষক আশরাফ আলী বলেন আলুর ক্ষতিপূরণ না পেলে আইনের আশ্রয় নিব। এছাড়া একই মাঠে করিমের ডিপে মুকুল নামের একজনের ১১৬ শতক জমিতে ব্র্যাকের বীজ আলু রোপণ করে তারও কোন আলুর গাছ বের হয়নি। এসব বিষয়ে সদর ৎপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, রবি মৌসুমে দেশে আলু বীজের চাহিদার তুলনায় সরকারি সংস্থা (বিএডিসি, বেসরকারি সংস্থার মিলিয়ে শতকরা ৬৪ ভাগ বীজের যোগান দিয়েছিলো। বাকিটা কৃষক স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন করেছিলো। একদিকে যেমন বাজারে বীজের সংকট দেখিয়ে দফায় দফায় নীরবে দাম বৃদ্ধি পায় অন্য দিকে সংকটে ভেজাল বীজ বিক্রি বেশি হয়।ভেজাল বীজে বাজার সয়লাব। প্যাকেটের গায়ে উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের কোনো নাম নেই। নেই বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির সিল। এজেন্সির লাইসেন্স থাকলে যে কেউ এভাবে প্যাকেটজাত আলু বীজ হিসেবে বিক্রি করতে পারেন। বীজ প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বীজ ব্যবসায়ীরা। কৃষক বাঁচলে বাঁচবে আমাদের বাংলাদেশ। দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপশি বীজ সিন্ডিকেট ধ্বংস করে ভেজাল বীজ বিক্রি বন্ধ করা সময়ের দাবি। কৃষক পর্যায়ে বীজের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া, কৃষকদের সচেতনতার অভাব, বাজারে বীজের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতা, নিকটস্থ দোকান থেকে বীজ ক্রয়, এমনকি বীজের সিন্ডিকেটের ফলে ভেজাল বীজ কিনে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরাজয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে কৃষকদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি, ইতিমধ্যে কৃষি অফিসার বরাবর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাফসিয়া জাহান বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা সেখানে গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি, তদন্তের পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসা করার কথা কোম্পানিগুলোর। কিন্তু কৃষকদের সরলতার সুযোগে প্রতারণা করেছে৷ আলু বীজ খুবই স্পর্শকাতর ফসল। হয়তো তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কৃষকদের কাছে বিক্রি বা বাজারজাত করেছে। কৃষকদের এই ক্ষতির দায় ব্রাক সিড কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।