দিনাজপুরে “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বাকিতে মাল দিয়ে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো মামলা খেয়ে হয়রানির শিকার

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

মন্ডল মোঃ আলিফ আল মারজান ।। প্রসঙ্গত, গত ১লা ডিসেম্বর আকর্ষণীয় এবং লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিয়ে দিনাজপুর শহরের চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সম্মুখ সড়কে গোহাটি এলাকায় স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহেল মিয়ার ব্যবস্থাপনায় “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” নামে একটি রেস্তরাঁ যাত্রা শুরু করে। কিন্তু দোকানের আসবাবপত্র, রান্নার সরঞ্জাম, সিটিং, কার্পেট, এসি, টিভি, সিসি ক্যামেরা, স্টিকার, পোশাক ও খাবারের আইটেমসহ সব কিছুই যৎ সামান্য টাকা দিয়ে দিন কয়েকের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের মিথ্যে আশ্বাস আর ব্যাংকের চেক দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে।ইতোমধ্যে চাল ,ডাল ,তেল সবজি থেকে শুরু করে আসবাবপত্র ও রান্নার সরঞ্জামাধিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা পাওনা টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন মাধ্যমে একের পর এক তারিখ নিয়ে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। নির্ধারিত তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর কয়েকটি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যেমন সিঙ্গার তাদের সরবরাহ করা চারটি এসি খুলে নিয়ে যায়। লটারির জন্য নূর মটরস থেকে সরবরাহ করা দুটি মোটরসাইকেল তারা ফেরত নিয়ে যায়। কিন্তু “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” এর স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহেল মিয়া সকল পাওনাদারদের বিভিন্ন ব্যাংকের চেক দিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে নির্ধারিত তারিখে ব্যবসায়ী পাওনাদারেরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এভাবে একের পর এক তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পরে পুনরায় তার দেওয়া তারিখ মোতাবেক গত ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখ সকল পাওনাদার ব্যবসায়ীরা “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” এর স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহেল মিয়ার কাছে গেলে তিনি আবারও টাকা দিতে ব্যর্থ হন ।পরিশেষে মোঃ সোহেল মিয়া নিজের টাকা পরিশোধের ব্যর্থতা ঢাকতে তার ম্যানেজারকে নির্দেশ দেন মোমিন এন্টারপ্রাইজ এর মালামাল ফেরত দেওয়ার জন্য। মোমিন এন্টারপ্রাইজ এর প্রদানকৃত মালামাল বুঝে নেওয়ার প্রাক্কালে অন্যান্য পাওনাদার ব্যবসায়ীরাও বকেয়া টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় রেস্টুরেন্টের মালামাল নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” এর স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহেল মিয়া দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় চাঁ*দাবাজি ও মালামাল লু*টে*র অভিযোগ এনে মোমিন এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী মোঃ মোমিন, এস ডি টেইলার্স এর স্বত্বাধিকারী মোঃ লতিফুর, মুন্নি ভ্যারাইটিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ শাহ আলম,  মোঃ আরিফ, মোঃ রাহুল এবং ব্যবসায়ী মোঃ শামসুল এর নাম উল্লেখ করে ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে গা ঢাকা দেন। একাধিক ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” এর স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহেল মিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি বাবদ ভবন মালিককে এক কোটি টাকা প্রদানের মিথ্যে কথা বলে ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করে দিনাজপুরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রদান করে। পরবর্তীতে ভবন মালিককে এক কোটি টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ টাকার চেক প্রদানের সত্য তথ্য বেরিয়ে আসে যা সেই চেকে আদৌ কালেকশন হয়নি বলে জানান ভবন মালিক। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যেমন মোমিন এন্টারপ্রাইজ এর নিকট ২লক্ষ টাকার আসবাবপত্র, মোমিনুল হক সবজি ব্যবসায়ীর নিকট দেড় লক্ষ টাকার সবজি, মুন্নি ভ্যারাইটি স্টোরের মাসুদ রানার নিকট ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার বাসনপত্র, চাল ব্যবসায়ী শাহ আলম এর নিকট থেকে ১৮ বস্তা চাল, ফার্নিচার থাই এলুমিনিয়াম এর দোকান থেকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার ফিটিংস, মিটসেফ হাউজ রেজওয়ান এর নিকট থেকে দেড় লক্ষ টাকার মালামাল, নান্নু কসাই এর দোকানে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার মাংস, প্রগ্রেসিভ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সমবায় সমিতি থেকে ৫ লক্ষ টাকার ঋণ, নিউ রূপালী স্টোর থেকে সাড়ে আট হাজার টাকার কার্পেট, ফিরোজ স্টোর থেকে ৮শত টাকার তোয়ালে, স্টিকার ব্যবসায়ীর নিকট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্টিকার, এস ডি টেইলার্স এর নিকট ২৫ হাজার টাকার পোশাকসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মালামাল ও নগদ টাকা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, মোঃ সোহেল মিয়া সুদূর সিলেট থেকে এসে স্বল্প পুঁজি লাগিয়ে একাধিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে পথে বসিয়ে সে ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। আমরা দিনাজপুরের মানুষ সহজ সরল তাই তার কথায় বিশ্বাস করে ব্যবসায়িক চিন্তা করেই লক্ষ লক্ষ টাকার মাল বাকি দিয়ে নিজেরাই আজ হয়রানির শিকার হচ্ছি। অনেক ব্যবসায়ী আবার ক্ষোভের বসীভুত হয়ে বলেন কষ্ট আর ঘাম ঝড়ানো পয়সা একটাকাও ছাড় দিবো না।প্রয়োজনে আমরাও আইনের আশ্রয় নিবো। সে বাইরে থেকে এসে এখানে ব্যবসার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর কৌশল হিসেবে “চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” এর ব্যবসা শুরু করেছিল।নইলে এরকম একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে এক মাসেই সবজি থেকে প্রতিষ্ঠানের সবকিছুই বাকিতে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখে কী করে? এ বিষয়ে “সিলেট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট” এর স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহেল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার কাছ থেকে কোনো সদোত্তর পাওয়া যায়নি।